পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী واسbد ভগবান অনেক মানুষ স্থষ্টি করেছেন কিন্তু সকলের জন্তে কেবল একটিমাত্র পথ খুলে রাখেন নি । বিনয় তোমাকে প্রাণের মতে ভালোবাসে, তাই সে তোমার কাছ থেকে সমস্তই সহ করে— কিন্তু তোমারই পথে তাকে চলতে হবে এ জবৰ্দস্তি করলে সেটা সুখের হবে না ।” গোরা কহিল, “মা, আর-একটু দুধ এনে দাও।” কথাটা এইখানেই চুকিয় গেল । আহারান্তে আনন্দময়ী তাহার তক্তপোশে চুপ করিয়া বসিয়া সেলাই করিতে লাগিলেন । লছমিয়া বাড়ির বিশেষ কোনো ভূত্যের দুর্ব্যবহারসম্বন্ধীয় আলোচনায় আনন্দময়ীকে টানিবার বৃথা চেষ্টা করিয়া মেজের উপর শুইয়া পড়িয় ঘুমাইতে লাগিল । গোরা চিঠিপত্র লিখিয়া অনেকটা সময় কাটাইয়া দিল । গোরা তাহার উপর রাগ করিয়াছে বিনয় তাহা আজ সকালে স্পষ্ট দেখিয়া গেছে, তবু যে সে এই রাগ মিটাষ্টয়া ফেলিবার জন্য গোরার কাছে আসিবে না ইহা হইতেই পারে না জানিয়া সে সকল কর্মের মধ্যেই বিনয়ের পদশব্দের জন্য কান পাতিয়া রহিল । বেলা বহিয়া গেল— বিনয় আসিল না । লেখা ছাড়িয়া গোর উঠবে মনে করিতেছে এমন সময় মহিম আসিয়া ঘরে ঢুকিলেন । আসিয়াই চেকিতে বসিয়া পড়িয়া কছিলেন, “শশিমুখীর বিয়ের কথা কী ভাবছ গোরা ?” এ কথা গোরা এক দিনের জন্যও ভাবে নাই, সুতরাং অপরাধীর মতো তাহাকে চুপ করিয়া থাকিতে হইল । বাজারে পাত্রের মূল্য যে কিরূপ চড়া এবং ঘরে অর্থের অবস্থা ষে কিরূপ অসচ্ছল তাহা আলোচনা করিয়া গোরাকে একটা উপায় ভাবিতে বলিলেন । গোরা যখন ভাবিয়া কিনার পাইল না তখন তিনি তাহাকে চিস্তাসংকট হষ্টতে উদ্ধার করিবার জন্য বিনয়ের কথাটা পাড়িলেন । এত ঘোরফের করিবার কোনো প্রয়োজন ছিল না, কিন্তু মহিম গোরাকে মুখে যাই বলুন মনে মনে ভয় করিতেন । এ প্রসঙ্গে বিনয়ের কথা যে উঠিতে পারে গোরা তাহা কখনো স্বপ্নেও ভাবে নাই । বিশেষত গোরা এবং বিনয় স্থির করিয়াছিল, তাহারা বিবাহ না করিয়া দেশের কাজে জীবন উৎসর্গ করিবে । গোর তাই বলিল, “বিনয় বিয়ে করবে কেন ?” মহিম কহিলেন, “এই বুঝি তোমাদের হিদুয়ানি ! হাজার টিকি রাখ আর ফোট কাট সাহেবিয়ানা হাড়ের মধ্যে দিয়ে ফুটে ওঠে । শাস্ত্রের মতে বিবাহটী যে ব্রাহ্মণের ছেলের একটা সংস্কার তা জান ?” মহিম এখনকার ছেলেদের মতো আচারও লঙ্ঘন করেন না আবার শাস্কের ধারও