>brbr রবীন্দ্র-রচনাবলী বরদাসুন্দরী মনে করিলেন আচার্যের উপদেশ তাহার মনের মধ্যে কাজ করিতেছে — তিনি তাই কোনো কথা বলিলেন না । Σ (Κ রাত্রে গোরা বাড়িতে ফিরিয়া আসিয়া অন্ধকার ছাতের উপর বেড়াইতে লাগিল । তাহার নিজের উপর রাগ হইল । রবিবারটা কেন সে এমন বৃথা কাটিতে দিল । ব্যক্তিবিশেষের প্রণয় লইয়া অন্য সমস্ত কাজ নষ্ট করিবার জন্য তো গোরা পৃথিবীতে আসে নাই । বিনয় যে পথে যাইতেছে সে পথ হইতে তাহাকে টানিয়া রাথিবীর চেষ্টা করিলে কেবলই সময় নষ্ট এবং নিজের মনকে পীড়িত করা হইবে । অতএব জীবনের যাত্রাপথে এখন হইতে বিনয়কে বাদ দিতে হইবে । জীবনে গোরার একটিমাত্র বন্ধু আছে তাহাকেই ত্যাগ করিয়া গোরা তাহার ধর্মকে সত্য করিয়া তুলিবে । এই বলিয়া গোরা জোর করিয়া হাত নাড়িয়া বিনয়ের সংস্রবকে নিজের চারি দিক হইতে যেন সরাইয়া ফেলিল । এমন সময় মহিম ছাতে আসিয়া হাপাইতে লাগিলেন– কহিলেন, "মামুষের যখন ডানা নেই তখন এই তেতলা বাড়ি তৈরি করা কেন ? ডাঙার মাতুষ হয়ে আকাশে বাস করবার চেষ্টা করলে আকাশবিহারী দেবতার সয় না । বিনয়ের কাছে গিয়েছিলে ?” গোরা তাহার স্পষ্ট উত্তর না করিয়া কহিল, "বিনয়ের সঙ্গে শশিমুখীর বিয়ে হতে পারবে না ।” মহিম । কেন বিনয়ের মত নেই না কি ? গোরা । আমার মত নেই । মহিম হাত উলটাইয়। কছিলেন, “বেশ ! এ আবার একটা নতুন ফ্যাসাদ দেখছি। তোমার মত নেই । কারণটা কী শুনি ।" গোর । আমি বেশ বুঝেছি বিনয়কে আমাদের সমাজে ধরে রাখা শক্ত হবে । ওর সঙ্গে আমাদের ঘরের মেয়ের বিবাহ চলবে না । মহিম । ঢের ঢের হিন্দুয়ানি দেখেছি, কিন্তু এমনটি আর কোথাও দেখলুম না । কাশী-ভাটপাড়া ছাড়িয়ে গেলে ! তুমি যে দেখি ভবিষ্কং দেখে বিধান দাও। কোন দিন বলবে, স্বপ্নে দেখলুম খ্রীস্টান হয়েছ, গোবর পেয়ে জাতে উঠতে হবে । অনেক বকfবকির পর মহিম কহিলেন, “মেয়েকে তো মূর্ধর হাতে দিতে পারি নে। যে ছেলে লেখাপড়া শিখেছে, যার বুদ্ধিশুদ্ধি আছে, সে ছেলে মাঝে মাঝে শাস্ক ডিঙিয়ে
