গোরা S$) বিনয় একবার গোরার মুখের দিকে চাহিল। গোরা কছিল, “বিনয়, অনেক দিন বাঁচবে। তোমার ওখানেই যাচ্ছিলুম।” আনন্দময়ীর বুক হালকা হইয় গেল— তিনি তাড়াতাড়ি নীচে চলিয়া গেলেন । দুই বন্ধু ঘরে আসিয়া বসিলে গোরা যাহা তাহা একটা কথা তুলিল— কহিল, "জান, আমাদের ছেলেদের জন্তে এক জন বেশ ভালে| জিমনাস্টিক মাস্টার পেয়েছি । সে শেখাচ্ছে বেশ ।” মনের ভিতরের আসল কথাটা এখনও কেহ পাড়িতে সাহস করিল না । দুই জনে যখন থাইতে বসিয়া গেল তখন আনন্দময়ী তাহাদের কথাবার্তায় বুঝিতে পারিলেন এখনো তাহাদের উভয়ের মধ্যে বাধে|-বাধো রহিয়াছে— পর্দ উঠিয়া যায় নাই । তিনি কহিলেন, “বিনয়, রাত অনেক হয়েছে, তুমি আজ এইখানেই শুয়ো । অামি তোমার বাসায় খবর পাঠিয়ে দিচ্ছি ।" বিনয় চকিতের মধ্যে গোরার মুখের দিকে চাহিয়া কহিল, "ভূক্ত রাজবদাচরেং । থেয়ে রাস্তায় হাট নিয়ম নয় । তা হলে এইখানেই শোয়া যাবে।” আহারান্তে দুষ্ট বন্ধু ছাতে আসিয়া মাদুর পাতিয়া বসিল । ভাদ্রমাস পড়িয়াছে ; শুক্লপক্ষের জ্যোৎস্নায় আকাশ ভাসিয়া যাইতেছে । হালকা পাতলা সাদা মেঘ ক্ষণিক ঘুমের ঘোরের মতো মাঝে মাঝে চাদকে একটুখানি ঝাপসা করিয়া দিয়া আস্তে আস্তে উড়িয়া চলিতেছে । চারি দিকে দিগন্ত পর্যন্ত নানা আয়তনের উচু নিচু ছাতের শ্রেণী ছায়াতে আলোতে এবং মাঝে মাঝে গাছের মাথার সঙ্গে মিশিয়া যেন সম্পূর্ণ প্রয়োজনহীন একটা প্রকাগু অবাস্তব খেয়ালের মতো পড়িয়া রহিয়াছে । গির্জার ঘড়িতে এগারোটার ঘণ্টা বাজিল ; বরফওয়ালা তাহার শেষ হাক হাকিয়া চলিয়া গেল। গাড়ির শব্দ মন্দ হইয়া আসিয়াছে । গোরাদের গলিতে জাগরণের লক্ষণ নাই, কেবল প্রতিবেশীর আস্তাবলে কাঠের মেজের উপর ঘোড়ার খুরের শব্দ এক-এক বার শোনা যাইতেছে এবং কুকুর ঘেউঘেউ করিয়া উঠিতেছে । দুই জনে অনেক ক্ষণ চুপ করিয়া রহিল । তাছার পরে বিনয় প্রথমটা একটু দ্বিধা করিয়া অবশেষে পরিপূর্ণবেগে তাহার মনের কথাকে বন্ধনমুক্ত করিয়া দিল । বিনয় কহিল, "ভাই গোরা, আমার বুক ভরে উঠেছে । আমি জানি এ-সব বিষয়ে তোমার মন নেই, কিন্তু তোমাকে না বললে আমি বঁচিব না। আমি ভালো মন কিছুই বুঝতে পারছি নে— কিন্তু এটা নিশ্চয় এর সঙ্গে কোনো চাতুরী খাটবে না। বইয়েতে অনেক কথা পড়েছি এবং এতদিন মনে করে এসেছি সব জানি । ঠিক যেন ছবিতে জল দেখে
