পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা So> আবদ্ধ হইতে পারে নাই বলিয়া হারানবাবুর একাস্ত ব্রান্ধিকতা স্বচরিতার স্বাভাবিক মানবত্বকে যেন পীড়া দিত। হারানবাবু মনে করিতেন, ধর্মসাধনার ফলে তাহার দৃষ্টিশক্তি এমন আশ্চর্য স্বচ্ছ হইয়াছে যে, অন্য সকল লোকেরই ভালোমন্দ ও সত্যাসত্য তিনি অতি অনায়াসেই বুঝিতে পারেন। এইজন্য সকলকেই তিনি সর্বদাই বিচার করিতে উদ্যত । বিষয়ী লোকেরাও পরনিন্দ পরচর্চা করিয়া থাকে, কিন্তু যাহারা ধাৰ্মিকতার ভাষায় এই কাজ করে তাহাদের সেই নিন্দার সঙ্গে অধ্যাত্মিক অহংকার মিশ্রিত হইয়া সংসারে একটা অত্যন্ত স্বতীব্র উপদ্রবের স্বষ্টি করে । স্বচরিতা তাহা একেবারেই সহিতে পারিত না । ব্রাহ্মসম্প্রদায় সম্বন্ধে স্বচরিতার মনে যে কোনো গর্ব ছিল না তাহা নহে, তথাপি ব্ৰাহ্মসমাজের মধ্যে র্যাহারা বড়োলোক তাহারা যে ব্রাহ্ম চ ওয়ারক্ট দরুন বিশেষ একটা শক্তি লাভ করিয়া বড়ো হইয়াছেন এবং ব্রাহ্মসমাজের বাহিরে BBBS BB BDD BBB BB BB BS BBBBB BBB BBBBB BBB BBBS নষ্ট হইয়াছে এ কথা লঙ্গয়া হারানবাবুর সঙ্গে সুচরিতার অনেক বার তর্ক হইয়া গিয়াছে । হারানবাবু ব্রাহ্মসমাজের মঙ্গলের প্রতি লক্ষ করিয়া যখন বিচারে পরেশবাবুকেও অপরাধী করিতে ছড়িতেন না তখনই সুচরিত যেন আহত ফণিনীর মতো অসহিষ্ণু হইয়া উঠিত । সে সময়ে বাংলাদেশে ইংরেজিশিক্ষিত দলের মধ্যে ভগবদগীতা লইয়া আলোচনা ছিল না। কিন্তু পরেশবাবু স্বচরিতাকে লইয়া মাঝে মাঝে গীত পড়িতেন— কালীসিংহের মহাভারতও তিনি প্রায় সমস্তটা সুচরিত্যকে পড়িয়া শুনাইয়াছেন । হারানবাবুর কাছে তাহা ভালো লাগে নাই । এ-সমস্ত গ্রন্থ তিনি ব্রাহ্মপরিবার হইতে নির্বাসিত করিবার পক্ষপাতী । তিনি নিজেও এগুলি পড়েন নাই । রামায়ণমহাভারত-ভগবদগীতাকে তিনি হিন্দুদের সামগ্ৰী বলিয়া স্বতন্ত্র রাথিতে চাহিতেন । ধর্মশাস্ত্রের মধ্যে বাষ্টবল তাহার একমাত্র অবলম্বন ছিল । পরেশবাবু যে তাহার শাস্ত্রচর্চা এবং ছোটোখাটো নানা বিষয়ে ব্রাহ্ম-আব্রাহ্মের সীমা রক্ষা করিয়া চলিতেন না, তাহাতে হারানের গায়ে যেন কাটা বিধিত । পরেশের আচরণে প্রকাতে বা মনে মনে কেহ কোনো প্রকার দোষারোপ করিবে এমন স্পর্ধ মুচরিতা কখনোই সহিতে পারে না । এবং এইরূপ স্পর্ধা প্রকাশ হইয়া পড়াতেই হারানবাবু স্বচরিতার কাছে থাটো হইয়া গেছেন । এইরূপে নানা কারণে হারানবাবু পরেশবাবুর ঘরে দিনে দিনে নিম্প্রভ হইয়া আসিতেছেন। বরদাস্বন্দরীও যদিচ ব্রাহ্ম-অব্রান্ধের ভেদরক্ষায় হারানবাবুর অপেক্ষা কোনো অংশে কম উৎসাহী নহেন এবং তিনিও তাহার স্বামীর আচরণে অনেক সময়