পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२● 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী অকারণে বা ছোটো ছোটাে উপলক্ষ্য ধরিয়া খুংমুং করিয়াছেন। তৎসত্ত্বেও স্বচরিতার অবিচলিত ঔদাসীন্তে র্তাহাকে মনে মনে হার মানিতে হইয়াছে এবং নিজের মর্যাদ|হানিতে বাড়িতে আসিয়া পরিতাপ করিয়াছেন । যাহা হউক, সুচরিতার শ্রদ্ধাহীনতার দুই-একটা লক্ষণ দেখিয়া হারানবাবুর পক্ষে তাহার পরীক্ষকের উচ্চ আসনে দীর্ঘকাল স্থির হইয়া বসিয়া থাকা শক্ত হইয়া উঠিল । পূর্বে এত ঘন ঘন পরেশবাবুর বাড়িতে যাতায়াত করিতেন না— স্বচরিতার প্রেমে তিনি চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছেন, পাছে র্তাহাকে এইরূপ কেই সন্দেহ করে এই আশঙ্কায় তিনি সপ্তাহে কেবল এক বার করিয়া আসিতেন এবং সুচরিত যেন তাহার ছা স্ত্রী এমনিভাবে নিজের ওজন রাখিয়া চলিতেন । কিন্তু এই কয়দিন হঠাং কী হইয়াছে— হারানবাবু তুচ্ছ একটা ছুতা লইয়া দিনে একাধিক বারও আসিয়াছেন এবং ততোধিক তুচ্ছ ছুতা ধরিয়া স্বচরিতার সঙ্গে গায়ে পড়িয়া আলাপ করিবার চেষ্টা করিয়াছেন। পরেশবাবুও এই উপলক্ষ্যে উভয়কে ভালো করিয়া পর্যবেক্ষণ করিবার অবকাশ পাইয়াছেন এবং তাহার সন্দেহও ক্রমে ঘনীভূত হইয়া আসিতেছে । আজ হারানবাৰু আসিতেই বরদাসুন্দরী তাহাকে আড়ালে ডাকিয় লইয়। কহিলেন, "আচ্ছা, পাল্লুবাবু, আপনি আমাদের স্বচরিতাকে বিবাহ করবেন এই কথা সকলেই বলে, কিন্তু আপনার মুখ থেকে তো কোনে দিন কোনো কথা শুনতে পাঠ নে । যদি সত্যিই আপনার এ রকম অভিপ্রায় থাকে তা হলে স্পষ্ট করে বলেন না কেন ?" হারানবাবু আর বিলম্ব করিতে পারলেন না। এখন স্নচরিতাকে তিনি কোনো মতে বন্দী করিতে পারিলেই নিশ্চিস্ত হন—তাহার প্রতি ভক্তি ও ব্রাহ্মসমাজের হিতকল্পে যোগ্যতার পরীক্ষা পরে করিলেও চলিবে । হারানবাবু বরদাসুন্দরীকে কহিলেন, “এ কথা বলা বাহুল্য বলেই বলি নি । স্বচরিতার আঠারো বছর বয়সের জন্যষ্ঠ প্রতীক্ষা করছিলেম ।” বরদাসুন্দরী কহিলেন, “আপনার আবার একটু বাড়াবাড়ি আছে । আমরা তে চোদ্দ বছর হলেই যথেষ্ট মনে করি ।” সেদিন চ খাইবার সময় পরেশবাবু মুচরিতার ভাব দেখিয়া আশ্চর্য হইয়া গেলেন । কুচরিত হারানবাবুকে এত যত্ন-অভ্যর্থনা অনেক দিন করে নাই। এমন-কি, হারানবাবু যখন চলিয়। যাইবার উপক্ৰম করিতেছিলেন তখন তাহাকে লাবণ্যের নূতন একটা শিল্পকলার পরিচয় দিবার উপলক্ষ্যে আরও একটু বলিয়া থাকিতে অনুরোধ করিয়াছিল । পরেশবাবুর মন নিশ্চিন্ত হইল। তিনি ভাবিলেন, তিনি ভুল করিয়াছেন। এমন