পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী را ه با ইহাদের আতিথ্য গ্রহণ করিবার জন্তই গোরা জোর করিয়া তামাক খাওয়া ধরিয়াছিল । এই দলের মধ্যে নন্দ গোরার সর্বপ্রধান ভক্ত ছিল । নন্দ ছুতারের ছেলে । বয়স বাইশ । সে তাহার বাপের দোকানে কাঠের বাক্স তৈয়ারি করিত । ধাপার মাঠে শিকারির দলে নন্দর মতো অব্যৰ্থ বন্দুকের লক্ষ কাহারও ছিল না। ক্রিকেট খেলায় গোলা ছুড়িতেও সে অদ্বিতীয় ছিল । গোরা তাহার শিকার ও ক্রিকেটের দলে ভদ্র ছাত্রদের সঙ্গে এই সকল ছুতারকামারের ছেলেদের একসঙ্গে মিলাইয়া লইয়াছিল । এই মিশ্রিত দলের মধ্যে নন্দ সকলপ্রকার খেলায় ও ব্যায়ামে সকলের সেরা ছিল । ভদ্র ছাত্রেরা কেহ কেহ তাহার প্রতি ঈর্ষান্বিত ছিল, কিন্তু গোরার শাসনে সকলেরই তাহাকে দলপতি বলিয়া স্বীকার করিতে হইত। এই নন্দর পায়ে কয়েক দিন হইল একটা বাটালি পড়িয়া গিয়া ক্ষত হওয়ায় সে খেলার ক্ষেত্রে অনুপস্থিত ছিল । বিনয়কে লইয়া এই কয়দিন গোরার মন বিকল ছিল, সে তাহদের বাড়িতে যাইতে পারে নাই । আজ প্রভাতেই বিনয়কে সঙ্গে করিয়া সে ছুতারপাড়ায় গিয়া উপস্থিত হইল । নন্দদের দোতলা খোলার ঘরের দ্বারের কাছে আসিতেই ভিতর হইতে মেয়েদের কান্নার শব্দ শোনা গেল । নন্দর বাপ বা অন্য পুরুষ অভিভাবক বাড়িতে নাই । পাশে একটি তামাকের দোকান ছিল তাহার কর্তা আসিয়া কহিল, “নন্দ আজ ভোরবেলায় মারা পড়িয়াছে, তাহাকে দাহ করিতে লইয়া গেছে ।” নন্দ মারা গিয়াছে ! এমন স্বাস্থ্য, এমন শক্তি, এমন তেজ, এমন হৃদয়, এত অল্প বয়স— সেই নন্দ আজ ভোরবেলায় মারা গিয়াছে । সমস্ত শরীর শক্ত করিয়া গোরা স্তব্ধ হইয়া দাড়াইয়া রহিল । নন্দ এক জন সামান্য ছুতারের ছেলে— তাহার অভাবে ক্ষণকালের জন্য সংসারে যেটুকু ফাক পড়িল তাহা অতি অল্প লোকেরই চোখে পড়িবে, কিন্তু আজ গোরার কাছে নন্দর মৃত্যু নিদারুণরূপে অসংগত ও অসম্ভব বলিয়া ঠেকিল । গোরা যে দেখিয়াছে তাহার প্রাণ ছিল— এত লোক তো বাচিয়া আছে, কিন্তু তাহার মতো এত প্রচুর প্রাণ কোথায় দেখিতে পাওয়া যায়। কী করিয়া তাহার মৃত্যু হইল খবর লইতে গিয়া শোনা গেল যে, তাহার ধতুষ্টঙ্কার হইয়াছিল । নন্দর বাপ ডাক্তার আনিবার প্রস্তাব করিয়াছিল, কিন্তু নন্দর মা জোর করিয়া বলিল তাহার ছেলেকে ভূতে পাইয়াছে। ভূতের ওঝা কাল সমস্ত রাত তাহার গায়ে ছেকা দিয়াছে, তাহাকে মারিয়াছে এবং মন্ত্ৰ পড়িয়াছে। ব্যামোর