পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা रै२ e সাময়িক প্রয়োজন-সাধনের লুন্ধতায় সত্যকে ক্ষুব্ধ করিয়া তোলা সাধারণ লোকের পক্ষেই স্বাভাবিক, কিন্তু তাহার গোরা কি সেই সাধারণ লোকের দলে ? স্বচরিতা রাত্রে বিছানায় আসিয়া শুইলে পর ললিতা তাহার খাটের এক ধারে আসিয়া বসিল । স্বচরিতা বুঝিল, ললিতার মনের ভিতর একটা কোনো কথা ঘুরির বেড়াইতেছে। কথাটা যে বিনয়ের সম্বন্ধে তাহাও স্বচরিতা বুঝিয়াছিল। সেইজন্ত স্বচরিতা আপনি কথা পাড়িল, “বিনয়বাবুকে কিন্তু আমার বেশ ভালো লাগে ।” ললিত কহিল, “তিনি কিনা কেবলই গৌরবাবুর কথাই বলেন, সেইজন্তে তোমার ভালো লাগে ।” স্বচরিতা এ কথাটার ভিতরকার ইঙ্গিতটা বুঝিয়াও বুঝিল না । সে একটা সরল ভাব ধারণ করিয়া কহিল, “তা সত্যি, ওঁর মুখ থেকে গৌরবাবুর কথা শুনতে আমার ভারি আনন্দ হয় । আমি যেন তাকে স্পষ্ট দেখতে পাই ।” ললিত কহিল, “আমার তো কিছু ভালো লাগে না— আমার রাগ ধরে ।” সুচরিতা আশ্চর্য হইয়া কহিল, "কেন ?” ললিত কহিল, “গোর, গোরা, গোরা, দিনরাত্রি কেবল গোরা ! ওঁর বন্ধু গোরা হয়তো খুব মস্ত লোক, বেশ তো, ভালোই তো— কিন্তু উনিও তো মানুষ ।” স্বচরিতা হাসিয়া কছিল, “তা তো বটেই, কিন্তু তার ব্যাঘাত কি হয়েছে ?” ললিত। ওর বন্ধু ওঁকে এমনি ঢেকে ফেলেছেন যে উনি নিজেকে প্রকাশ করতে পারছেন না ; যেন কঁাচপোকায় তেলাপোকাকে ধরেছে— ওরকম অবস্থায় ক্টাচপোকার উপরেও আমার রাগ ধরে, তেলাপোকার উপরেও আমার শ্রদ্ধা হয় त्र' ।। ললিতার কথার কাজ দেখিয়া স্বচরিতা কিছু না বলিয়া হাসিতে লাগিল । ললিতা কছিল, "দিদি, তুমি হাসছ, কিন্তু আমি তোমাকে বলছি, আমাকে যদি কেউ ওরকম করে চাপা দিতে চেষ্টা করত আমি তাকে এক দিনের জন্তেও সহ করতে পারতুম না । এই মনে করো, তুমি— লোকে বাই মনে করুক তুমি আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখ নি— তোমার সেরকম প্রকৃতিই নয়— সেইজন্তেই আমি তোমাকে এত ভালোবাসি। আসল, বাবার কাছে থেকে তোমার ওই শিক্ষা হয়েছে— তিনি সব লোককেই তার জায়গাটুকু ছেড়ে দেন।” এই পরিবারের মধ্যে স্বচরিতা এবং ললিতা পরেশবাবুর পরম ভক্ত— বাবা বলিতেই তাছাদের হৃদয় যেন স্ফীত হইয়া উঠে ।