পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা २२» বিনয় কছিল, “আপনি ভাদ্র-আশ্বিন মাসই বা মানেন কেন ?” মহিম কছিলেন, “আমি মানি বুঝি ! কোনোকালেই না। কী করব বাবা— এ মুলুকে ভগবানকে না মানলেও বেশ চলে যায়, কিন্তু ভাদ্র-অশ্বিন বৃহস্পতি-শনি তিথি-নক্ষত্র না মানলে যে কোনোমতে ঘরে টিকতে দেয় না। আবার তাও বলি— মানি নে বলছি বটে, কিন্তু কাজ করবার বেলা দিন ক্ষণের অন্যথা হলেই মনটা অপ্রসন্ন হয়ে ওঠে— দেশের হাওয়ায় যেমন ম্যালেরিয়া হয় তেমনি ভয়ও হয়, ওটা কাটিয়ে উঠতে পারলুম না ।” বিনয় । আমাদের বংশে অস্ত্রানের ভয়টাও কাটবে না । অন্তত খুড়িমা কিছুতেই রাজি হবেন না । এমনি করিয়া সেদিনকার মতে বিনয় কোনোমতে কথাটা চাপা দিয়া রাখিল । বিনয়ের কথার স্বর শুনিয়া গোরা বুঝিল, বিনয়ের মনে একটা দ্বিধা উপস্থিত হইয়াছে। কিছুদিন হইতে বিনয়ের দেখাই পাওয়া যাইতেছিল না । গোরা বুঝিয়ছিল বিনয় পরেশবাবুর বাড়ি পূর্বের চেয়েও আরও ঘন ঘন যাতায়াত আরম্ভ করিয়াছে। তাহার পরে আজ এই বিবাহের প্রস্তাবে পাশ কাটাইবার চেষ্টায় গোরার মনে পটকা বাধিল । সাপ যেমন কাহাকে ও গিলিতে আরম্ভ করিলে তাহাকে কোনোমতেই ছাড়িতে পারে না— গোরা তেমনি তাহার কোনো সংকল্প ছাড়িয়া দিতে বা তাহার একটু-আধটু বাদ দিতে একেবারে অক্ষম বলিলেই হয় । অপর পক্ষ হইতে কোনো বাধা অথবা শৈথিল্য উপস্থিত হইলে তাহার জেদ আরও চড়িয়া উঠিতে থাকে । দ্বিধাগ্রস্ত বিনয়কে সবলে ধরিয়া রাখিবার জন্ত গোরার সমস্ত অন্ত:করণ উষ্ঠত হইয়া উঠিল । গোরা তাহার লেখা ছাড়িয়া মুখ তুলিয়া কহিল, "বিনয়, এক বার যখন তুমি দাদাকে কথা দিয়েছ তখন কেন ওঁকে অনিশ্চিতের মধ্যে রেখে মিথ্যে কষ্ট দিচ্ছ ?” বিনয় হঠাং অসহিষ্ণু হইয়া বলিয়া উঠিল, “আমি কথা দিয়েছি— না তাড়াতাড়ি আমার কাছ থেকে কথা কেড়ে নেওয়া হয়েছে ?” গোরা বিনয়ের এই অকস্মাৎ বিদ্রোহের লক্ষণ দেখিয়া বিস্মিত এবং কঠিন হইয়া উঠিয়া কহিল, "কথা কে কেড়ে নিয়েছিল ?” বিনয় কহিল, “তুমি ।” গোরা । আমি ! তোমার সঙ্গে এ সম্বন্ধে আমার পাচ-সাতটার বেশি কথাই হয় নি— তাকে বলে কথা কেড়ে নেওয়া ! বস্তুত বিনয়ের পক্ষে স্পষ্ট প্রমাণ কিছুই ছিল না— গোরা বাহা বলিতেছে তাহ