পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩২ রবীন্দ্র-রচনাবলী মহিম আশ্চর্ষ হইয়া কহিলেন, “এখন তো বলছ বেশ তো’ । এর পরে আবার বাগড়া দেবে না তো ?” গোরা কহিল, “আমি তো বাধা দিয়ে বাগড়া দিই নি, অনুরোধ করেই বাগড় দিয়েছি।” মহিম । অতএব তোমার কাছে আমার মিনতি এই যে, তুমি বাধাও দিয়ে না, অনুরোধও কোরো না । কুরুপক্ষে নারায়ণী সেনাতেও আমার কাজ নেই, আর পাণ্ডবপক্ষে নারায়ণেও আমার দরকার দেখি নে ! আমি একলা যা পারি সেই ভালো— ভুল করেছিলুম— তোমার সহায়তাও যে এমন বিপরীত তা আমি পূর্বে জানতুম না। যা হোক, কাজটা হয় এটাতে তোমার ইচ্ছা আছে তো ? গোরা । হা, ইচ্ছা আছে । মহিম । তা হলে ইচ্ছাই থাক, কিন্তু চেষ্টায় কাজ নেই । গোরা রাগ করে বটে এবং রাগের মুখে সবই করিতে পারে সেটাও সত্য— কিন্তু সেই রাগকে পোষণ করিয়া নিজের সংকল্প নষ্ট করা তাহার স্বভাব নয় । বিনয়কে যেমন করিয়া হউক সে বঁাধিতে চায়, এখন অভিমানের সময় নহে । গতকল্যকার ঝগড়ার প্রতিক্রিয়ার দ্বারাতেই যে বিবাহের কথাটা পাক হইল, বিনয়ের বিদ্রোহই ষে বিনয়ের বন্ধনকে দৃঢ় করিল, সে কথা মনে করিয়া গোরা কালিকার ঘটনায় মনে মনে খুশি হইল। বিনয়ের সঙ্গে তাহাদের চিরন্তন স্বাভাবিক সম্বন্ধ স্থাপন করিতে গোরা কিছুমাত্র বিলম্ব করিল না । কিন্তু এবার জনকার মাঝখানে তাহাদের এক স্ত সহজ ভাবের একটুখানি ব্যতিক্রম ঘটিল । গোরা এবার বুঝিয়াছে দূর হইতে বিনয়কে টানিয় রাখা শক্ত হইবে— বিপদের ক্ষেত্র যেখানে সেইখানেই পাহারা দেওয়া চাই । গোরা মনে ভাবিল, আমি যদি পরেশবাবুদের বাড়িতে সর্বদ যাতায়াত রাখি তাহা হইলে বিনয়কে ঠিক গণ্ডির মধ্যে ধরিয়া রাথিতে পারিব । 鱷 সেই দিনই অর্থাং ঝগড়ার পরদিন অপরাহ্লে গোরা বিনয়ের বাসায় আসিয়া উপস্থিত হইল । আজই গোরা আসিবে বিনয় কোনোমতেই এমন আশা করে নাই । সেই জন্য সে মনে মনে যেমন খুশি তেমনি আশ্চর্য হইয়া উঠিল । আরও আশ্চর্যের বিষয় গোরা পরেশবাবুদের মেয়েদের কথাই পাড়িল, অথচ তাহার মধ্যে কিছুমাত্র বিরূপতা ছিল না । এই আলোচনায় বিনয়কে উত্তেজিত করিয়া তুলিতে বেশি চেষ্টার প্রয়োজন করে না। স্বচরিতার সঙ্গে বিনয় যে-সকল কথার আলোচনা করিয়াছে তাহা আজ লে