পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা ९©¢ ভঙ্গ ঘটাতে স্বচরিতার আরাম বোধ হইল ; গোরা আসিয়াছে শুনিয়া তাহার মনে যে একটা উত্তেজন হয় নাই তাহাও নহে, কিন্তু হারানবাবুর সম্মুখে গোরার আগমনে তাহার মনের মধ্যে ভারি একটা অস্বন্তি এবং সংকোচ বোধ হইতে লাগিল । দুজনে পাছে বিরোধ বাধে এই মনে করিয়া, অথবা কী যে তাহার কারণ তাহা বলা শক্ত । গেীরের নাম শুনিয়াই হারানবাবুর মনের ভিতরটা একেবারে বিমুখ হইয়া উঠিল । গেীরের নমস্কারে কোনোমতে প্রতি নমস্কার করিয়া তিনি গম্ভীর হইয়া বসিয়া রছিলেন । হারানকে দেখিবামাত্র গোরার সংগ্রাম করিবার প্রবৃত্তি সশস্ত্রে উষ্ঠত হইয়া উঠিল । বরদা সুন্দরী তাহার তিন মেয়েকে লইয়া নিমন্ত্রণে গিয়াছিলেন ; কথা ছিল সন্ধ্যার সময় পরেশবাবু গিয়া তাহাদিগকে ফিরাইয়া আনিবেন । পরেশবাবুর বাইবার সময় হষ্টয়াছে ! এমন সময় গোরা ও বিনয় আসিয়া পড়াতে তাহার বাধা পড়িল । কিন্তু আর বিলম্ব করা উচিত হইবে না জানিয়া তিনি হারান ও স্বচরিতাকে কানে কানে বলিয়া গেলেন, “তোমরা এদের নিয়ে একটু বোসো, আমি যত শীঘ্ৰ পারি ফিরে আসছি ।" দেখিতে দেপিতে গোরা এবং হারানবাবুর মধ্যে তুমুল তর্ক বাধিয়া গেল । যে প্রসঙ্গ লইয়া তর্ক তাছা এই— কলিকাতার অনতিদূরবতী কোনো জেলার মাজিস্ট্রেট ব্রাউনলো সাহেবের সহিত ঢাকায় থাকিতে পরেশবাবুদের আলাপ হইয়াছিল । পরেশবাবুর স্বীকার অন্তঃপুর হইতে বাহির হইতেন বলিয়া সাহেব এবং উাছার স্ত্রী ইহুদিগকে বিশেষ খাতির করিতেন । সাহেব তাঙ্কার জন্মদিনে প্রতি বৎসরে কুযি প্রদর্শনী মেলা করিয়া থাকেন । এবারে বরদাসুন্দরী ব্রাউনলো সাহেবের স্বীর সছিত দেপা করিবার সময় ইংরেজ কাব্যসাহিত্য প্রভৃতিতে নিজের কন্যাদের বিশেষ পারদর্শিতার কথা উত্থাপন করাতে মেমসাহেব সহসা কহিলেন, ‘এবার মেলার লেফটেনাণ্ট গবর্নর সঙ্গীক আসিবেন, আপনার মেয়েরা যদি উাহাজের সম্মুখে একটা ছোটোখাটো ইংরেজি কাব্যনাট্য অভিনয় করেন তো বড়ো ভালো হয় । এই প্রস্তাবে বরদাসুন্দরী অভ্যস্ত উৎসাহিত হষ্টয়া উঠিয়াছেন । আজ ভিনি মেয়েদের রিহার্সাল দেওয়াইবার জগুই কোনো বন্ধুর বাড়িতে লইয়া গিয়াছেন । এই মেলায় গোরার উপস্থিত থাকা সম্ভবপর হুইবে কি ন জিজ্ঞাসা করার গোয়া কিছু জনাবগুক উগ্রতার শঙ্কিত বলিয়াছিল— না । এই প্রসঙ্গে এ দেশে ইংরেজ-বাঙালির সম্বন্ধ ও পরম্পর সামাজিক সম্মিলনের বাধা লইয়া দুই তরফে রীতিমত ৰিভণ্ড উপস্থিত হইল ।