পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२8० রবীন্দ্র-রচনাবলী হতে হতে তাদের যে কেবলই অধোগতি হচ্ছে এ কথার অনুভূতি পর্যন্ত তাদের চলে যাচ্ছে। পরের কাধে ভর দিয়ে নিজের লোকদের নীচু করে দেখব এবং নিচু করে দেখবামাত্রই তাদের প্রতি অবিচার করতে বাধ্য হব, এতে কোনো মঙ্গল হতে পারে না ।” বলিয়া গোর টেবিলে একটা মুষ্টি আঘাত করিল ; তেলের শেজটা কঁপিয়া উঠিল । বিনয় কহিল, “গোরা, এ টেবিলটা গবর্মেন্টের নয়, আর এই শেজটা পরেশবাবুদের।” শুনিয়া গোরা উচ্চৈঃস্বরে হাসিয়া উঠিল । তাহার হাস্তোর প্রবল ধ্বনিতে সমস্ত বাড়িটা পরিপূর্ণ হইয়া গেল । ঠাটা শুনিয়া গোরা যে ছেলেমামুষের মতো এমন প্রচুরভাবে হাসিয়া উঠিতে পারে ইহাতে স্বচরিতা আশ্চর্য বোধ করিল এবং তাহার মনের মধ্যে ভারি একটা আনন্দ হইল যাহার বড়ো কথার চিন্তু করে তাহারা যে প্রাণ খুলিয়া হালিতে পারে এ কথা তাহার জানা ছিল না। গোরা সেদিন অনেক কথাই বলিল স্বচরিতা যদিও চুপ করিয়া ছিল কিন্তু তাহার মুখের ভাবে গোর এমন একটা সায় পাইল যে, উৎসাহে তাহার হৃদয় ভরিয়া উঠিল । শেষকালে স্বচরিতাকেই যেন বিশেষভাবে সম্বোধন করিয়া কছিল, "দেখুন, একটি কথা মনে রাখবেন— যদি এমন ভুল সংস্কার আমাদের হয় যে, ইংরেজরা যখন প্রবল হয়ে উঠেছে তখন আমরাও ঠিক ইংরেজটি না হলে কোনোমতে প্রবল হতে পারব না, তা চলে সে অসম্ভব কোনোদিন সম্ভব হবে না এবং কেবলই নকল করতে করতে আমরা দুয়ের বার হয়ে যাব । এ কথা নিশ্চয় জানবেন ভারতের একটা বিশেষ প্রকৃতি, বিশেষ শক্তি, বিশেষ সত্য আছে, সেইটের পরিপূর্ণ বিকাশের দ্বারাই ভারত সার্থক হবে, ভারত রক্ষণ পাবে । ইংরেজের ইতিহাস পড়ে এইটে যদি আমরা না শিখে থাকি তবে সমস্তই ভুল শিখেছি। আপনার প্রতি আমার এই অনুরোধ, আপনি ভারতবর্ষের ভিতরে আস্থন, এর সমস্ত ভালোমদের মাঝখানেই নেবে দাড়ান, — যদি বিকৃতি থাকে, তবে ভিতর থেকে সংশোধন করে তুলুন, কিন্তু একে দেখুন, বুঝুন, ভাবুন, এর দিকে মুখ ফেরান, এর সঙ্গে এক হোন— এর বিরুদ্ধে দাড়িয়ে, বাইরে থেকে, খ্ৰীস্টানি সংস্কারে বাল্যকাল হতে অস্থিমজ্জায় দীক্ষিত হয়ে, একে আপনি বুঝতেই পারবেন না, একে কেবলই আঘাত করতেই থাকবেন, এর কোনো কাজেই লাগবেন না ।” গোরা বলিল বটে আমার অনুরোধ ; কিন্তু এ তো অনুরোধ নয়, এ যেন আদেশ ! কথার মধ্যে এমন একটা প্রচগু জোর যে, তfহ অঙ্কের সন্মতির অপেক্ষাই করে না। স্বচরিতা মুখ নত করিয়াই সমস্ত শুনিল । এমন একটা