পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

रै8२ রবীন্দ্র-রচনাবলী ব্যক্ত । কিন্তু তার বিশেষের শেষ নেই । জল তার বিশেষ, স্থল তার বিশেষ, বায়ু তার বিশেষ, অগ্নি তার বিশেষ, প্রাণ র্তার বিশেষ, বুদ্ধি প্রেম সমস্তই তার বিশেষ— গণনা করে কোথাও তার অন্ত পাওয়া যায় না— বিজ্ঞান তাই নিয়ে মাথা ঘুরিয়ে মরছে । ধিনি নিরাকার তার আকারের অন্ত নেই– হ্রস্বদীর্ঘ-স্কুলস্থক্ষ্মের অনন্ত প্রবাহই তার । যিনি অনস্তবিশেষ তিনিই নির্বিশেষ, যিনি অনস্তরূপ তিনিই অরূপ । অন্যান্ত দেশে ঈশ্বরকে নৃনাধিক পরিমাণে কোনো একটিমাত্র বিশেষের মধ্যে বাধতে চেষ্টা করেছে — ভারতবর্ষেও ঈশ্বরকে বিশেষের মধ্যে দেখবার চেষ্টা আছে বটে, কিন্তু সেই বিশেষকেই ভারতবর্ষ একমাত্র ও চূড়ান্ত বলে গণ্য করে না । ঈশ্বর যে সেই বিশেষকে ও অনস্তগুণে অতিক্রম করে আছেন এ কথা ভারতবর্ষের কোনো ভক্ত কোনোদিন অস্বীকার করেন না ।” স্বচরিতা কহিল, “জ্ঞানী করেন না, কিন্তু অজ্ঞানী ?” গোরা কহিল, “আমি তো পূর্বেই বলেছি অজ্ঞানী সকল দেশেষ্ট সকল সত্যকেই বিকৃত করবে ।” সুচরিত কহিল, “কিন্তু আমাদের দেশে সেই বিকার কি বেশি দূর পর্যন্ত পৌঁছয় 后?” গোরা কহিল, “তা হতে পারে । কিন্তু তার কারণ ধর্মের স্থল ও সূক্ষ্ম, অস্তর ও বাহির, শরীর ও আত্ম, এই দুটো অঙ্গকেই ভারতবর্ষ পূর্ণভাবে স্বীকার করতে চায় ব’লেই যারা সূক্ষ্মকে গ্রহণ করতে পfরে না তার স্থলটাকেই নেয় এবং অজ্ঞানের দ্বারা সেই স্থলের মধ্যে নানা অদ্ভুত বিকার ঘটাতে থাকে । কিন্তু ধিনি রূপেও সত্য অরূপেও সত্য, স্থলেও সত্য স্থক্ষ্মেও সত্য, ধ্যানেও সত্য প্রত্যক্ষেও সত্য, তাকে ভারতবর্ষ সর্বতোভাবে দেহে মনে কর্মে উপলব্ধি করবার যে আশ্চর্য বিচিত্র ও প্রকাগু চেষ্টা করেছে তাকে আমরা মূঢ়ের মতো অশ্রদ্ধা করে যুরোপের অষ্টাদশ শতাব্দীর নাস্তিকতায়আস্তিকতায় মিশ্রিত একটা সংকীর্ণ নীরস অঙ্গহীন ধর্মকেই একমাত্র ধর্ম বলে গ্রহণ করব এ হতেই পারে না । আমি যা বলছি তা আপনাদের আশৈশবের সংস্কারবশত ভালো করে বুঝতেই পারবেন না, মনে করবেন এ লোকটর ইংরেজি শিখেও শিক্ষার কোনো ফল হয় নি ; কিন্তু ভারতবর্ষের সত্য প্রকৃতি ও সত্য সাধনার প্রতি যদি আপনার কোনোদিন শ্রদ্ধা জন্মে, ভারতবর্ষ নিজেকে সহস্র বাধা ও বিকৃতির ভিতর দিয়েও যে রকম করে প্রকাশ করছে সেই প্রকাশের গভীর আভ্যন্তরে যদি প্রবেশ করতে পারেন, তা হলে— তা হলে, কী আর বলব, আপনার ভারতবর্ষীয় স্বভাবকে শক্তিকে ফিরে পেয়ে আপনি মুক্তি লাভ করবেন।”