পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা Հ8Գ অনিন্দ্যশ্বন্দর হাতখানির আঙুলগুলির স্পর্শসৌভাগ্যের অনাস্বাদিত অমৃত তাহার ধ্যানের সম্মুখে তুলিয়া ধরিল ; গোরার সমস্ত শরীরে পুলকের বিদ্যুৎ চকিত হইয়া উঠিল । একাকী অন্ধকারের মধ্যে এই প্রগাঢ় অহুভূতি তাহার সমস্ত প্রশ্নকে, সমস্ত দ্বিধাকে একেবারে নিরন্ত করিয়া দিল । সে তাহার এই নৃতন অনুভূতিকে সমস্ত “ দেহ মন দিয়া উপভোগ করিতে লাগিল— ইহাকে ছাড়িয়া সে উঠতে ইচ্ছা করিল न1 ।। অনেক রাত্রে যখন গোরা বাড়ি গেল তখন আনন্দময়ী জিজ্ঞাসা করিলেন, “এত রাত করলে যে বাবা, তোমার খাবার যে ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।” গোরা কহিল, “কী জানি মা, আজ কী মনে হল, অনেক ক্ষণ গঙ্গার ঘাটে বসে ছিলুম।” আনন্দময়ী জিজ্ঞাসা করিলেন, “বিনয় সঙ্গে ছিল বুঝি ?” গোরা কহিল, "না, আমি একলাই ছিলুম।” আনন্দময়ী মনে মনে কিছু আশ্চর্য হইলেন । বিনা প্রয়োজনে গোরা যে এত রাত পর্যস্ত গঙ্গার ঘাটে বলিয়া ভাবিবে এমন ঘটনা কখনোই হয় নাই। চুপ করিয়া বসিয়া ভাবা তাহার স্বভাবই নহে । গোরা যখন অন্যমনস্ক হইয়া খাইতেছিল আনন্দময়ী লক্ষ্য করিয়া দেখিলেন তাহার মুখে যেন একটা কেমনতরো উতলা ভাবের উদ্দীপনা । আনন্দময়ী কিছুক্ষণ পরে আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আজ বুঝি বিনয়ের বাড়ি গিয়েছিলে ?” গোরা কহিল, "না, আজ আমরা দুজনেই পরেশবাবুর ওখানে গিয়েছিলুম।” শুনিয়া আনন্দময়ী চুপ করিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিলেন। আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “ওদের সকলের সঙ্গে তোমার আলাপ হয়েছে ?” গোরা কহিল, "ই হয়েছে।” আনন্দময়ী । ওঁদের মেয়েরা বুঝি সকলের সাক্ষাতেই বেরোন ? গোরা । হা, ওদের কোনো বাধা নেই । অন্য সময় হইলে এরূপ উত্তরের সঙ্গে সঙ্গে একটা উত্তেজনা প্রকাশ পাইত, আজ তাহার কোনো লক্ষণ না দেখিয়া আনন্দময়ী আবার চুপ করিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিলেন । পরদিন সকালে উঠিয়া গোরা অন্য দিনের মতো অবিলম্বে মুখ ধুইয়া দিনের কাজের জন্য প্রস্তুত হইতে গেল না। সে অন্যমনস্কভাবে তাহার শোবার ঘরের পূর্ব দিকের مثالا من