পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శ్నా २68 রবীন্দ্র-রচনাবলী গেল। যোগ না-দিবার পক্ষে যতগুলি তর্ক, সমস্ত তাহার মনে প্রবল হইয়া উঠিল । তখন তাহার মন পীড়িত হইয়া বলিতে লাগিল, কেবল আমার অনুরোধ রাখিবার জন্ত বিনয়বাবুর এমন করিয়া রাজি হওয়া উচিত হয় নাই। অনুরোধ ! কেন অনুরোধ রাখিবেন ? তিনি মনে করেন, অনুরোধ রাখিয়া তিনি আমার সঙ্গে ভদ্রতা করিতেছেন । র্তাহার এই ভদ্রতাটুকু পাইবার জন্ত আমার যেন অত্যন্ত মাথাব্যথা ? কিন্তু এখন অমন করিয়া স্পর্ধা করিলে চলিবে কেন ? সত্যই যে সে বিনয়কে অভিনয়ের দলে টানিবার জন্য ক্রমাগত নিবন্ধ প্রকাশ করিয়াছে। বিনয় ভদ্রতার দায়ে তাহার এত জেদের অনুরোধ রাখিয়াছে বলিয়া রাগ করিলেই বা বলিবে কেন ? এই ঘটনায় ললিতার নিজের উপরে এমনই তীব্র ঘৃণা ও লজ্জা উপস্থিত হইল যে স্বভাবত এতটা হইবার কোনো কারণ ছিল না । অন্যদিন হইলে তাহার মনের চাঞ্চল্যের সময় সে স্বচরিতার কাছে যাইত । আজ গেল না এবং কেন যে তাহার বুকটাকে ঠেলিয়া তুলিয়া তাহার চোখ দিয়া এমন করিয়া জল বাহির হইতে লাগিল তাহা সে নিজেই ভালো করিয়া বুঝিতে পারিল না। পরদিন সকালে স্বধীর লাবণ্যকে একটি তোড়া আনিয়া দিয়াছিল । সেই তোড়ার একটি বোটায় দুইটি বিকচোমুখ বসোরা-গোলাপ ছিল । ললিতা সেটি তোড় হইতে খুলিয়া লইল । লাবণ্য কহিল, “ও কী করছিস ?” ললিত কহিল, “তোড়ায় অনেকগুলো বাজে ফুল-পাতার মধ্যে ভালে। ফুলকে বাধা দেখলে আমার কষ্ট হয়, ওরকম দড়ি দিয়ে সব জিনিসকে এক শ্রেণীতে জোর করে বাধা বর্বরতা ।” এই বলিয়া সমস্ত ফুলকে বন্ধনমুক্ত করিয়া ললিতা সেগুলিকে ঘরের এ দিকে, ও দিকে পৃথক করিয়া সাজাইল ; কেবল গোলাপ দুটিকে হাতে করিয়া লইয়া গেল । সতীশ চুটিয়া আসিয়া কহিল, “দিদি, ফুল কোথায় পেলে ?” ললিতা তাহার উত্তর না দিয়া কহিল, “আজ তোর বন্ধুর বাড়িতে যাবি নে ?” বিনয়ের কথা এতক্ষণ সতীশের মনে ছিল না, কিন্তু তাঙ্গার উল্লেখমাত্রেই লাফাইয়া উঠিয়া কহিল, “ই যাব।” বলিয়। তখনই যাইবার জন্য অস্থির হইয়া উঠিল । ললিতা তাহাকে ধরিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “সেখানে গিয়ে কী করিস ?” সতীশ সংক্ষেপে কহিল, “গল্প করি।” ললিতা কহিল, "তিনি তোকে এত ছবি দেন, তুই তাকে কিছু দিল নে কেন ?” বিনয় ইংরেজি কাগজ প্রভৃতি হইতে সতীশের জন্ত নানাপ্রকার ছবি কাটিয়া রাথিত। একটা থাত করিয়া সতীশ এই ছবিগুলি তাহাতে গদ দিয়া আঁটিতে