পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা Rఆరి আমি বরাবর তোমাদের সঙ্গে সেইরকম করেই ব্যবহার করেছি। প্রশ্নটা ঠিকমতো মনে জেগে ওঠবার পূর্বেই সে সম্বন্ধে কোনো উপদেশ দিতে যাওয়া আর ক্ষুধা পাবার পূর্বেই খাবার খেতে দেওয়া একই, তাতে কেবল অঙ্কচি এবং অপাক হয় । তুষি আমাকে যখনই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবে আমি যা বুঝি বলব।” স্বচরিতা কছিল, “আমি তোমাকে প্রশ্নই জিজ্ঞাসা করছি, আমরা জাতিভেদকে নিন্দ করি কেন ?” পরেশবাবু কহিলেন, “একটা বিড়াল পাতের কাছে বসে ভাত খেলে কোনো দোষ হয় না অথচ একজন মানুষ সে ঘরে প্রবেশ করলে ভাত ফেলে দিতে হয়, মানুষের প্রতি মানুষের এমন অপমান এবং ঘৃণা ষে জাতিভেদে জন্মায় সেটাকে অধৰ্ম না বলে কী বলব ? মানুষকে যারা এমন ভয়ানক অবজ্ঞ করতে পারে তারা কখনোই পৃথিবীতে বড়ো হতে পারে না, অস্তের অবজ্ঞা তাদের সইতেই হবে ।” স্বচরিত। গোরার মুখে শোনা কথার অমুসরণ করিয়া কহিল, “এখনকার সমাজে যে বিকার উপস্থিত হয়েছে তাতে অনেক দোষ থাকতে পারে ; সে দোষ তো সমাজের সকল জিনিসেই ঢুকেছে, তাই বলে আসল জিনিসটাকে দোষ দেওয়া যায় কি ?” পরেশবাবু তাহার স্বাভাবিক শাস্তবরে কহিলেন, "আসল জিনিসটা কোথায় আছে জানলে বলতে পারতুম। আমি চোখে দেখতে পাচ্ছি আমাদের দেশে মানুষ মানুষকে অসহ্য ঘৃণা করছে এবং তাতে আমাদের সকলকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে, এমন অবস্থায় একটা কাল্পনিক আসল জিনিসের কথা চিন্ত করে মন সাম্বন মানে কই ?” স্বচরিতা পুনশ্চ গোরাদের কথার প্রতিধ্বনি-স্বরূপে কহিল, “আচ্ছা, সকলকে সমদৃষ্টিতে দেখাই তো আমাদের দেশের চরমতত্ত্ব ছিল ।" পরেশবাবু কছিলেন, "সমষ্টিতে দেখা জ্ঞানের কথা, হৃদয়ের কথা নয়। সমদৃষ্টির মধ্যে প্রেমও নেই, ঘৃণা ও নেই— সমদৃষ্টি রাগদ্বেষের অতীত । মানুষের হৃদয় এমনতরো হৃদয়ধর্মবিহীন জায়গায় স্থির দাড়িয়ে থাকতে পারে না । সেই জন্তে আমাদের দেশে এরকম সাম্যতত্ত্ব থাকা সত্ত্বেও নীচ জাতকে দেবালয়ে পর্যন্ত প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না । যদি দেবতার ক্ষেএেও আমাদের দেশে সাম্য না থাকে তবে দর্শনশাস্কের মধ্যেও সে তত্ত্ব থাকলেই কী আর না থাকলেই কী ?” স্বচরিতা পরেশবাবুর কথা অনেক ক্ষণ চুপ করিয়া বলিয়া মনে মনে বুঝিতে চেষ্টা করিতে লাগিল। অবশেষে কছিল, “আচ্ছা বাবা, তুমি বিনয়বাবুদের এ-সৰ কথা বোঝাবার চেষ্টা কর না কেন ?” Įł পরেশবাবু একটু হাসিয়া কছিলেন, “বিনয়বাবুদের বুদ্ধি কম বলে ৰে এ-সৰ কথা &I)"