পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী من اج অস্থির করিয়া তুলিল । কিন্তু এখন সমস্ত আয়োজনকে বিপর্যস্ত করিয়া দিয়া বিনয় অকারণে পলাতক হইবে কী বলিয়া ? সময়ও আর অধিক নাই ; এবং নিজের একটা নূতন নৈপুণ্য আবিষ্কার করিয়া সে নিজেই এই কাজে উৎসাহিত হইয়া উঠিয়াছে। অবশেষে ললিতা বরদাসুন্দরীকে কহিল, “আমি এতে থাকব না ।” বরদাসুন্দরী র্তাহার মেজো মেয়েকে বেশ চিনিতেন, তাই নিত্যস্ত শঙ্কিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, "কেন ?” ললিত কহিল, “আমি যে পারি নে ৷” বস্তুত যখন হইতে বিনয়কে আর আনাড়ি বলিয়া গণ্য করিবার উপায় ছিল না, তখন হইতেই ললিতা বিনয়ের সম্মুখে কোনোমতেই আবৃত্তি বা অভিনয় অভ্যাস করিতে চাহিত না । সে বলিত, ‘আমি আপনি আলাদা অভ্যাস করিব ? ইহাতে সকলেরই অভ্যাসে বাধা পড়িত, কিন্তু ললিতাকে কিছুতেই পারা গেল না । অবশেষে, হার মানিয়া অভ্যাসক্ষেত্রে ললিতাকে বাদ দিয়াই কাজ চালাইতে হইল । কিন্তু যখন শেষ অবস্থায় ললিতা একেবারেই ভঙ্গ দিতে চাহিল তখন বরদাসুন্দরীর মাথায় বজ্রাঘাত হইল । তিনি জানিতেন যে র্তাহার দ্বারা ইহার প্রতিকর হইতেই পারিবে না। তখন তিনি পরেশবাবুর শরণাপন্ন হইলেন। পরেশবাবু সামান্ত বিষয়ে কখনোই তাহার মেয়েদের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় হস্তক্ষেপ করিতেন না । কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে র্তাহারা প্রতিশ্রুত হইয়াছেন, সেই অনুসারে সে পক্ষও আয়োজন করিয়াছেন, সময়ও অত্যন্ত সংকীর্ণ, এই সমস্ত বিবেচনা করিয়। পরেশবাৰু ললিতাকে ডাকিয় তাহার মাথায় হাত দিয়া কহিলেন, “ললিতা, এখন তুমি ছেড়ে দিলে ষে অন্যায় হবে ।” ললিত রুদ্ধরোদন কণ্ঠে কহিল, “বাবা, আমি যে পারি নে। আমার হয় না।” পরেশ কহিলেন, “তুমি ভালো না পারলে তোমার অপরাধ হবে না, কিন্তু না করলে অন্যায় হবে ।” ললিতা মুখ নিচু করিয়া দাড়াইয়া রহিল ; পরেশবাবু কহিলেন, “মা, যখন তুমি ভার নিয়েছ তখন তোমাকে তো সম্পন্ন করতেই হবে । পাছে অহংকারে ঘা লাগে বলে আর তো পালাবার সময় নেই । লাগুক-না ঘা, সেটাকে অগ্রাহ করেও তোমাকে কর্তব্য করতে হবে । পারবে না মা ?” ললিতা পিতার মুখের দিকে মুখ তুলিয়া কহিল, “পারব।” সেইদিনই সন্ধ্যাবেলায় বিশেষ করিয়া বিনয়ের সম্মুখেই সমস্ত সংকোচ সম্পূর্ণ দূর