পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা २b^(t অভিজ্ঞতা দেখিয়া সাহেব আশ্চর্য হইয়া গিয়াছিলেন এবং খৃস্টান ধর্ম গ্রহণে তিনি অল্প একটুমাত্র বাধা কেন রাখিয়াছেন এই প্রশ্নও হারানবাবুকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন । আজ অপরাহ্লে নদীতীরের পথে হারানবাবুর সঙ্গে তিনি ব্রাহ্মসমাজের কার্ধপ্রণালী ও হিন্দুসমাজের সংস্কারসাধন সম্বন্ধে গভীরভাবে আলোচনায় নিযুক্ত ছিলেন । এমন সময় গোরা "গুড ঈভনিং সার” বলিয়া তাহার সম্মুখে আসিয়া দাড়াইল । কাল লে ম্যাজিস্ট্রেটের সহিত দেখা করিবার চেষ্টা করিতে গিয়া বুঝিয়াছে যে সাহেবের চৌকাঠ উত্তীর্ণ হইতে গেলে তাহার পেয়াদার মাশুল যোগাইতে হয় । এরূপ দণ্ড ও অপমান স্বীকার করিতে অসম্মত হইয়া আজ সাহেবের হাওয়া থাইবার অবকাশে সে তাছার সহিত দেখা করিতে আসিয়াছে । এই সাক্ষাংকালে হারানবাৰু ও গোরা উভয় পক্ষ হইতেই পরিচয়ের কোনো লক্ষণ প্রকাশ হুইল না । লোকটাকে দেখিয়া সাহেব কিছু বিস্থিত হইয়া গেলেন । এমন ছয় ফুটের চেয়ে লম্বা, হাড়-মোটা, মজবুত মানুষ তিনি বাংলা দেশে পূর্বে দেখিয়াছেন বলিয়া মনে করিতে পারিলেন না । ইহার দেহের বর্ণও সাধারণ বাঙালির মতো নহে । গায়ে একখানা থাকি রঙের পাঞ্জাবি জামা, ধুতি মোট ও মলিন, হাতে একগাছা বাশের লাঠি, চাদরখানাকে মাথায় পাগড়ির মতো বাধিয়াছে । 韌 গোরা ম্যাজিস্ট্রেটকে কহিল, "আমি চর-ঘোষপুর হইতে আসিতেছি।” ম্যাজিস্ট্রেট একপ্রকার বিশ্বয়স্থচক শিস দিলেন । ঘোষপুরের তদন্তকার্য একজন বিদেশী বাধা দিতে আসিয়াছে সে সংবাদ তিনি গতকল্যই পাইয়াছিলেন । তবে এই লোকটাই সে ! গোরাকে আপাদমস্তক তীক্ষভাবে একবার নিরীক্ষণ করিলেন এবং জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কোন জাত ?” গোরা কছিল, “আমি বাঙালি ব্রাহ্মণ ।” সাহেব কছিলেন, “৪ ! খবরের কাগজের সঙ্গে তোমার যোগ আছে বুঝি ?” গোরা কহিল, "না ।” ম্যাজিস্ট্রেট কছিলেন, “তবে ঘোষপুর-চয়ে তুমি কী করতে এসেছ ?” গোরা কছিল, "ভ্রমণ করতে করতে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলুম। পুলিসের অত্যাচারে গ্রামের তুর্গতির চিহ্ন দেখে এবং আরও উপত্রবের সম্ভাবনা আছে জেনে প্রতিকারের জন্য আপনার কাছে এসেছি।” ম্যাজিসট্রেট কছিলেন, "চর-ঘোষপুরের লোকগুলো অত্যন্ত বদমায়েস সে কথা তুমি জান ?”