পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা శి3(t করিলেন। স্বচরিত তাড়াতাড়ি চৌকি হইতে উঠিয়া পাশের ঘরে প্রবেশ করিয়া বেগে দ্বার ভেজাইয়া দিল । একটু পরেই ললিতা দ্বার ঠেলিয়া ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। দেখিল, স্বচরিত দুই হাতে মুখ ঢাকিয়া বিছানার উপর পড়িয়া আছে । । ললিতা ভিতর হইতে দ্বার রুদ্ধ করিয়া দিয়া ধীরে ধীরে স্বচরিতার পাশে বসিয়া তাহার মাথায় চুলের মধ্যে আঙুল বুলাইয়া দিতে লাগিল। অনেক ক্ষণ পরে স্বচরিতা যখন শাস্ত হইল তখন জোর করিয়া তাহার মুখ হইতে বাহুর আবরণ মুক্ত করিয়া তাহার মুপের কাছে মুখ লইয়া গিয়া কানে কানে বলিতে লাগিল, “দিদি, আমরা এখান থেকে কলকাতায় ফিরে যাই, আজ তো ম্যাজিস্ট্রেটের ওখানে যেতে পারব না ।” স্বচরিতা অনেক ক্ষণ এ কথার কোনো উত্তর করিল না । ললিতা যখন বার বার বলিতে লাগিল তখন সে বিছানায় উঠিয়া বসিল, “সে কী করে হবে ভাই ? আমার তো একেবারেই আসবার ইচ্ছা ছিল না— বাবা যখন পাঠিয়ে দিয়েছেন তখন যে জন্তে এসেছি তা না সেরে যেতে পারব না ।” ললিতা কহিল, “বাবা তো এ-সব কথা জানেন না— জানলে কখনোই আমাদের থাকতে বলতেন না ।” স্বচরিত কহিল, “তা কি করে জানব ভাই !” ললিতা। দিদি, তুই পারবি ? কী করে যাবি বল দেখি ! তার পরে আবার সাজগোজ করে স্টেজে দাড়িয়ে কবিতা আওড়াতে হবে । আমার তো জিব ফেটে গিয়ে রক্ত পড়বে তবু কথা বের হবে না । সুচরিতা কহিল, "সে তো জানি বোন ! কিন্তু নরকযন্ত্রণাও সইতে হয় । এখন আর কোনো উপায় নেই । আজকের দিন জীবনে আর কখনো ভুলতে পারব না ।” সুচরিতার এই বাধ্যতায় ললিতা রাগ করিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিল । মাকে আসিয়া কছিল, “মা, তোমরা যাবে না ?” বরদাসুন্দরী কছিলেন, “তুই কি পাগল হয়েছিল ? রাত্তির নটার পর যেতে হবে ।” ললিতা কহিল, “আমি কলকাতায় যাবার কথা বলছি।” বরদাসুন্দরী । শোনো একবার মেয়ের কথা শোনো ! ললিতা স্বধীরকে কছিল, “স্বধীরদ, তুমিও এখানে থাকবে ?” Եկծ?