পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఇవి\9 রবীন্দ্র-রচনাবলী গোরার শাস্তি স্বধীরের মনকে বিকল করিয়া দিয়াছিল, কিন্তু বড়ো বড়ো সাহেবের সম্মুখে নিজের বিদ্যা প্রকাশ করিবার প্রলোভন সে ত্যাগ করিতে পারে এমন সাধ্য তাহার ছিল না । সে অব্যক্তস্বরে কী একটা বলিল— বোঝা গেল সে সংকোচ বোধ করিতেছে, কিন্তু সে থাকিয়াই যাইবে । বরদাসুন্দরী কহিলেন, “গোলমালে বেলা হয়ে গেল। আর দেরি করলে চলবে না । এখন সাড়ে পাচটা পর্যন্ত বিছানা থেকে কেউ উঠতে পারবে না— বিশ্রাম করতে হবে । নইলে ক্লাস্ত হয়ে রাত্রে মুখ শুকিয়ে যাবে— দেখতে বিশ্ৰী হবে ।” এই বলিয়া তিনি জোর করিয়া সকলকে শয়নঘরে পুরিয়া বিছানায় শোওয়াইয়া দিলেন। সকলেই ঘুমাইয়া পড়িল, কেবল স্বচরিতার ঘুম হইল না এবং অন্ত ঘরে ললিতা তাহার বিছানার উপরে উঠিয়া বসিয়া রহিল । সটীমারে ঘন ঘন বঁশি বাজিতে লাগিল । সটীমার যখন ছাড়িবার উপক্রম করিতেছে, থালাসিরা সিড়ি তুলিবার জন্য প্রস্থত হইয়াছে, এমন সময় জাহাজের ডেকের উপর হইতে বিনয় দেখিল একজন ভদ্রস্ত্রীলোক জাহাজের অভিমুখে দ্রুতপদে আসিতেছে । তাহার বেশভূষা প্রভৃতি দেখিয়া তাহাকে ললিতা বলিয়াই মনে হইল, কিন্তু বিনয় সহসা তাহা বিশ্বাস করিতে পারিল না । অবশেষে ললিতা নিকটে আসিতে আর সন্দেহ রহিল না । একবার মনে করিল ললিতা তাহাকে ফিরাইতে আসিয়াছে, কিন্তু ললিতাই তো ম্যাজিস্ট্রেটের নিমন্ত্রণে যোগ দেওয়ার বিরুদ্ধে দাড়াইয়াছিল । ললিতা স্টীমারে উঠিয়া পড়িল— খালাসি সিড়ি তুলিয়া লইল । বিনয় শঙ্কিতচিত্তে উপরের ডেক হইতে নীচে নামিয়া ললিতার সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইল। ললিত কহিল, “আমাকে উপরে নিয়ে চলুন।” বিনয় বিস্মিত হইয়া কহিল, "জাহাজ যে ছেড়ে দিচ্ছে ।” ললিতা কহিল, “সে আমি জানি।” বলিয়া বিনয়ের জন্য অপেক্ষ না করিয়াই সম্মুপের সিড়ি বাছিয়া উপরের তলায় উঠিয়া গেল। স্টীমার বঁশি ফুকিতে ফুকিতে ছাড়িয়া দিল । বিনয় ললিতাকে ফাস্ট, ক্লাসের ডেকে কেদারায় বসাইয়া নীরব প্রশ্নে তাহার মুখের দিকে চাহিল । ললিত কহিল, “আমি কলকাতায় যাব— আমি কিছুতেই থাকতে পারলুম না।” বিনয় জিজ্ঞাসা করিল, “ওঁরা সকলে ?” ললিত কহিল, “এখন পর্যন্ত কেউ জানেন না। আমি চিঠি রেখে এসেছি— পড়লেই জানতে পারবেন।”