পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○obr রবীন্দ্র-রচনাবলী চাহিতে পারিতেছিল না— কেবল ক্ষণে ক্ষণে চোখে আপনি যেটুকু পড়িতেছিল, ললিতার কাপড়ের একটুকু অংশ, কোলের উপর নিশ্চলভাবে স্থিত তাহার একখানি হাত— মুহূর্তের মধ্যে ইহাই তাহাকে পুলকিত করিতে লাগিল । দেরি হইতে চলিল। পরেশবাবু এখনো তো আসিলেন না। উঠিবার জন্ত ভিতর হইতে তাগিদ ক্রমেই প্রবল হইতে লাগিল— তাহাকে কোনোমতে চাপা দিবার জন্য বিনয় সতীশের মাসীর সঙ্গে একাস্ত-মনে আলাপ করিতে থাকিল । অবশেষে ললিতার বিরক্তি আর বঁাধ মানিল না ; সে বিনয়ের কথার মাঝখানে সহসা বাধা দিয়া বলিয়া উঠিল, "আপনি দেরি করছেন কণর জন্তে ? বাবা কখন আসবেন তার ঠিক নেই। আপনি গৌরবাবুর মার কাছে একবার যাবেন না ?” বিনয় চমকিয়া উঠিল । ললিতার বিরক্তিস্বর বিনয়ের পক্ষে সুপরিচিত ছিল । সে ললিতার মুখের দিকে চাহিয়া এক মুহূর্তে একেবারে উঠিয়া পড়িল— হঠাং গুণ ছিড়িয়া গেলে ধনুক যেমন সোজা হইয় উঠে তেমনি করিয়া সে দাড়াইল । সে দেরি করিতেছিল কাহার জন্য ? এখানে যে তাহার কোনো একান্ত প্রয়োজন ছিল এমন অহংকার তো আপনা হইতে বিনয়ের মনে আসে নাই— সে তো দ্বারের নিকট হইতেই বিদায় লইতেছিল— ললিতাই তো তাহাকে অনুরোধ করিয়া সঙ্গে আনিয়াছিল— অবশেষে ললিতার মুখে এই প্রশ্ন ! বিনয় এমনি হঠাং আসন ছাড়িয়া উঠিয়া পড়িয়ছিল যে, ললিত বিস্মিত হুইয় তাহার দিকে চাহিল । দেখিল, বিনয়ের মুখের স্বাভাবিক সপ্তান্ততা একেবারে এক ফুংকারে প্রদীপের আলোর মতে সম্পূর্ণ নিবিয়া গেছে। বিনয়ের এমন ব্যথিত মুখ, তাহার ভাবের এমন অকস্মাং পরিবর্তন ললিতা আর কখনো দেখে নাই । বিনয়ের দিকে চাহিয়াই তীব্র অনুতাপের জালাময় কষাঘাত তংক্ষণাৎ ললিতার হৃদয়ের এক প্রাস্ত হইতে আর-এক প্রাস্তে উপরি উপরি বাজিতে লাগিল । সতীশ তাড়াতাড়ি উঠিয়া বিনয়ের হাত ধরিয়া ঝুলিয়া পড়িয়া মিনতির স্বরে কহিল, “বিনয়বাবু, বহন, এখনি যাবেন না । আমাদের বাড়িতে আজ থেয়ে যান। মাগম, বিনয়বাবুকে খেতে বলো-না। ললিতাদিদি, কেন বিনয়বাবুকে যেতে বললে ।” বিনয় কহিল, "ভাই সতীশ, আজ না ভাই ! মাসীমা যদি মনে রাখেন তবে আরএক দিন এসে প্রসাদ খাব । আজ দেরি হয়ে গেছে।” কথাগুলো বিশেষ কিছু নয়, কিন্তু কণ্ঠস্বরের মধ্যে অশ্র আচ্ছন্ন হইয়া ছিল । তাহার করুণা সতীশের মাসীমার কানেও বাজিল। তিনি একবার বিনয়ের ও