পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা ס צס ছায়া লইয়া ঠোটের উপর ঠোট চাপিয়া চুপ করিয়া রছিলেন। লছমিয়া যখন হাউহাউ করিয়া কাদিতে লাগিল তাহাকে তিরস্কার করিয়া অন্য ঘরে পাঠাইয়া দিলেন। সমস্ত উদ্‌বেগ নিস্তব্ধভাবে পরিপাক করাই তাহার চিরদিনের অভ্যাস। স্থখ ও দুঃখ উভয়কেই তিনি শাস্তভাবেই গ্রহণ করিতেন, তাহার হৃদয়ের আক্ষেপ কেবল অন্তর্যামীরই গোচর ছিল । বিনয় যে আনন্দময়ীকে কী বলিবে তাহা ভাবিয়া পাইল না । কিন্তু আনন্দময়ী কাহারও সাম্বনাবাক্যের কোনো অপেক্ষ রাখিতেন না ; তাহার যে দুঃখের কোনো প্রতিকার নাই সে দুঃখ লইয়া অন্ত লোকে তাহার সঙ্গে আলোচনা করিতে আসিলে উাছার প্রকৃতি সংকুচিত হইয়া উঠিত । তিনি আর কোনো কথা উঠিতে না দিয়া বিনয়কে কহিলেন, “বিহু, এখনো তোমার স্নান হয় নি দেখছি— যাও, শীঘ্ৰ নেয়ে এল গে— অনেক বেলা হয়ে গেছে ।” বিনয় স্নান করিয়া আসিয়া যখন আহার করিতে বসিল তখন বিনয়ের পাশে গোরার স্থান শূন্ত দেখিয়া আনন্দময়ীর বুকের মধ্যে হাহাকার উঠিল ; গোরাকে আজ জেলের অন্ন খাইতে হইতেছে, সে অন্ন নির্মম শাসনের দ্বারা কটু, মায়ের সেবার দ্বারা মধুর নহে, এই কথা মনে করিয়া আনন্দময়ীকেও কোনো ছুতা করিয়া একবার खेठेिग्न शांझे८ड झझेल । 'LL বাড়ি আলিয়া অসময়ে ললিতাকে দেখিয়াই পরেশবাবু বুঝিতে পারিলেন তাহার এই উদ্ধাম মেয়েটি অভূতপূর্বরূপে একটা-কিছু কাও বাধাইয়াছে। জিজ্ঞাস্ব দৃষ্টিতে তিনি তাহার মুখের দিকে চাহিতেই লে বলিয়া উঠিল, “বাবা, আমি চলে এসেছি । কোনোমতেই থাকতে পারলুম না।” পরেশবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, "কেন কী হয়েছে ?” ললিত কহিল, "গৌরবাবুকে ম্যাজিস্ট্রেট জেলে দিয়েছে।” গেীর ইহার মধ্যে কোথা হইতে আসিল, কী হইল, পরেশ কিছুই বুঝিতে পারিলেন না। ললিতার কাছে সমস্ত বৃত্তান্ত শুনিয়া কিছুক্ষণ শুদ্ধ হইয়া রছিলেন। তৎক্ষণাং গোরার মার কথা মনে করিয়া তাহার হৃদয় ব্যথিত হইয়া উঠিল। তিনি মনে ভাবিতে লাগিলেন, এক জন লোককে জেলে পাঠাইয়া কতকগুলি নিরপরাধ লোককে ষে কিরূপ নিষ্ঠুর দণ্ড দেওয়া হয় সে কথা যদি বিচারক অন্ত:করণের মধ্যে অনুভব করিতে পারিতেন তবে মানুষকে জেলে পাঠানো এত সহজ অভ্যস্ত কাজের মতে কখনোই হইতে পারিত না । এক জন চোরকে যে দণ্ড দেওয়া