পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী والانكا পরেশবাবু তাহাকে দ্বিতীয় বার অনুরোধ করিলেন না। বিনয় একবার চকিতের মতো দোতলার দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া ধীরে ধীরে চলিয়া গেল । উপর হইতে ললিতা বিনয়কে দেখিতে পাইয়াছিল । যখন পরেশবাবু একলা ঘরে ঢুকিলেন তখন ললিতা মনে করিল, বিনয় হয়তো আর-একটু পরেই আলিবে । আর-একটু পরেও বিনয় আসিল না। তখন টেবিলের উপরকার দুটো-একটা বই ও কাগজ-চাপা নাড়াচাড়া করিয়া ললিত ঘর হইতে চলিয়া গেল । পরেশবাবু তাহাকে ফিরিয়া ডাকিলেন– তাহার বিষন্ন মুখের দিকে স্নেহপূর্ণ দৃষ্টি স্থাপিত করিয়া কহিলেন, “ললিতা, আমাকে একটা ব্রহ্মসংগীত শোনাও।” বলিয়া বাতিটা আড়াল করিয়া দিলেন । S,8 পরদিনে বরদাসুন্দরী এবং তাহদের দলের বাকি সকলে আসিয়া পৌছিলেন । হারানবাবু ললিতা সম্বন্ধে তাহার বিরক্তি সম্বরণ করিতে না পারিয়া বাসায় না গিয়া ইহাদের সঙ্গে একেবারে পরেশবাবুর কাছে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। বরদাসুন্দরী ক্রোধে ও অভিমানে ললিতার দিকে ন ত! কাইয়া এবং তাহার সঙ্গে কোনো কথা ন৷ কহিয়া একেবারে তাহার ঘরে গিয়া প্রবেশ করিলেন । লাবণ্য ও লীলাও ললিতার উপরে খুব রাগ করিয়া আসিয়াছিল। ললিত এবং বিনয় চলিয়া আসাতে তাহাদের আবুত্তি ও অভিনয় এমন অঙ্গহীন হইয় পড়িয়াছিল যে, তাহাদের লজ্জার সীমা ছিল না । সুচরিতা হারানবাবুর ক্রুদ্ধ ও কটু উত্তেজনায়, বরদাসুন্দরীর অশ্রমিশ্রিত আক্ষেপে, অথবা লাবণ্য-লীলার লজ্জিত নিরুৎসাহে কিছুমাত্র যোগ না দিয়া একেবারে নিস্তব্ধ হইয়া ছিল— তাহার নির্দিষ্ট কাজটুকু সে কলের মতো করিয়া গিয়াছিল। আজও সে যন্ত্রচালিতের মতো সকলের পশ্চাতে ঘরে আসিয় প্রবেশ করিল। সুধীর লজ্জায় এবং অনুতাপে সংকুচিত হইয়া পরেশবাবুর বাড়ির দরজার কাছ হইতেই বাসায় চলিয়া গেল— লাবণ্য তাহাকে বাড়িতে আসিবার জন্য বার বার অনুরোধ করিয়া কৃতকার্য না হইয় তাহার প্রতি আড়ি করিল। হারান পরেশবাবুর ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়াই বলিয়া উঠিলেন, “একটা ভারি অন্যায় হয়ে গেছে ।” পাশের ঘরে ললিতা ছিল, তাহার কানে কথাট। প্রবেশ করিবামাত্র সে আসিয়া তাহার বাবার চৌকির পৃষ্ঠদেশে দুই হাত রাখিয়া দাড়াইল এবং হারানবাবুর মুখের দিকে একদৃষ্টে চাহিয়া রহিল ।