পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లిన8 রবীন্দ্র-রচনাবলী বিরক্তি প্রকাশ করিলেন। তাহার পরে তাহার খালাস হইতে আর কয়দিন বাকি তাহা আলোচনা করিতে গিয়া অত্যন্ত অকস্মাং মনে পড়িয়া গেল যে, অভ্রান মাসের প্রায় অর্ধেক হইয়া আসিয়াছে। কহিলেন, “বিনয়, তুমি যে বলেছিলে অভ্রানমাসে তোমাদের বংশে বিবাহ নিষেধ আছে, সেটা কোনো কাজের কথা নয়। একে তো পাজিপুথিতে নিষেধ ছাড়া কথাই নেই, তার উপরে যদি ঘরের শাস্ত্র বানাতে থাক তা হলে বংশরক্ষা হবে কী করে ?” বিনয়ের সংকট দেখিয়া আনন্দময়ী কহিলেন, “শশিমুখীকে এতটুকুবেলা থেকে বিনয় দেখে আসছে— ওকে বিয়ে করার কথা ওর মনে লাগছে না ; সেই জন্তেই অভ্রান মাসের ছুতে করে বসে আছে।” মহিম কহিলেন, “সে কথা তো গোড়ায় বললেই হত।" আনন্দময়ী কহিলেন, “নিজের মন বুঝতেও যে সময় লাগে। পাত্রের অভাব কী আছে মহিম । গোরা ফিরে আসুক— সে তে অনেক ভালে। ছেলেকে জানে— সে একটা ঠিক করে দিতে পারবে ।” মহিম মুখ অন্ধকার করিয়া কছিলেন, “হু”। খানিক ক্ষণ চুপ করিয়া রছিলেন, তাহার পরে কহিলেন, “ম, তুমি যদি বিনয়ের মন ভাঙিয়ে না দিতে তা হলে ও এ কাজে আপত্তি করত না ।” বিনয় ব্যস্ত হইয়া কী একটা বলিতে যাইতেছিল, আনন্দময়ী বাধা দিয়া কহিলেন, “তা, সত্য কথা বলছি মহিম, আমি ওকে উৎসাহ দিতে পারি নি । বিনয় ছেলেমানুষ, ও হয়তো না বুঝে একট কাজ করে বসতেও পারত, কিন্তু শেষকালে ভালো হত না ।” 峨 আনন্দময়ী বিনয়কে আড়ালে রাখিয়া নিজের পরেই মহিমের রাগের ধাক্কটি গ্রহণ করিলেন। বিনয় তাহা বুঝিতে পারিয়া নিজের দুর্বলতায় লজ্জিত হইয়া উঠিল । সে নিজের অসম্মতি স্পষ্ট করিয়া প্রকাশ করিতে উদ্যত হইলে মহিম আর অপেক্ষ না করিয়া মনে মনে এই বলিতে বলিতে বাহির হইয়া গেলেন যে, বিমাতা কখনো আপন হয় না । মহিম যে এ কথা মনে করিতে পারেন এবং বিমাতা বলিয়া তিনি যে সংসারের বিচারক্ষেত্রে বরাবর আসামি-শ্রেণীতেই ভুক্ত আছেন আনন্দময়ী তাহ জানিতেন । কিন্তু লোকে কী মনে করিবে এ কথা ভাবিয়া চলা তাহার অভ্যাসই ছিল না । যে দিন তিনি গোরাকে কোলে তুলিয়া লইয়াছেন সেই দিন হইতেই লোকের আচার লোকের বিচার হইতে র্তাহার প্রকৃতি একেবারে স্বতন্ত্ৰ হুইয়া গেছে। সে দিন হইতে