পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8סיס রবীন্দ্র-রচনাবলী বিবাহ হয়। র্তাহারা কুলেও যেমন ধনেও তেমন । কিন্তু আমার ভাগ্যে সুখ ঘটিল না । বিবাহের সময় খরচ-পত্ৰ লইয়া আমার শ্বশুরের সঙ্গে পিতার বিবাদ বাধিয়াছিল । আমার পিতৃগৃহের সেই অপরাধ আমার শ্বশুরবংশ অনেক দিন পর্যন্ত ক্ষমা করিতে পারেন নাই । সকলেই বলিত— আমাদের ছেলের আবার বিয়ে দেব, দেখি ও মেয়েটার কী দশা হয় । আমার দুর্দশ দেখিয়াই বাবা প্রতিজ্ঞ করিয়াছিলেন, কখনো ধনীর ঘরে মেয়ে দিবেন না । তাই তোমার মাকে গরিবের ঘরেই দিয়াছিলেন । বহু পরিবারের ঘর ছিল, আমাকে আট-নয় বৎসর বয়সের সময়েই রান্না করিতে হইত। প্রায় পঞ্চাশ-ষাট জন লোক খাইত । সকলের পরিবেষণের পরে কোনোদিন শুধু ভাত, কোনোদিন বা ডালভাত খাইয়াই কাটাইতে হইত। কোনোদিন বেলা দুইটার সময়ে কোনোদিন বা একেবারে বেলা গেলে আহার করিতাম । আহার করিয়াই বৈকালের রান্না চড়াইতে যাইতে হইত। রাত এগারোটা-বারোটার সময় খাইবার অবকাশ ঘটিত । শুইবার কোনো নির্দিষ্ট জায়গা ছিল না। অন্তঃপুরে যাহার সঙ্গে যেদিন সুবিধা হইত তাহার সঙ্গেই শুইয়া পড়িতাম ! কোনোদিন বা পিড়ি পাতিয়া নিদ্রা দিতে হইত। বাড়িতে আমার প্রতি সকলের যে অনাদর ছিল আমার স্বামীর মনও তাহাতে বিকৃত না হইয়া থাকিতে পারে নাই । অনেক দিন পর্যস্ত তিনি আমাকে দূরে দূরেই রাখিয়াছিলেন । এমন সময়ে অfমার বয়স যখন সতেরো তখন আমার কন্যা মনোরমা জন্মগ্রহণ করে । মেয়েকে জন্ম দেওয়াতে শ্বশুরকুলে আমার গঞ্জনা আরও বাড়িয়া গিয়াছিল । আমার সকল অনাদর সকল লাঞ্ছনার মধ্যে এই মেয়েটিই আমার একমাত্র সাস্বনা ও আনন্দ ছিল । মনোরমাকে তাহার বাপ এবং আর কেহ তেমন করিয়া আদর করে নাই বলিয়াই লে আমার প্রাণপণ আদরের সামগ্ৰী হইয়া উঠিয়াছিল। তিন বৎসর পরে যখন আমার একটি ছেলে হইল তখন হইতে আমার অবস্থার পরিবর্তন হইতে লাগিল । তখন আমি বাড়ির গৃহিণী বলিয়া গণ্য হইবার যোগ্য হইলাম। আমার শাশুড়ী ছিলেন না— আমার শ্বশুরও মনোরম জন্মিবার দুই বৎসর পরেই মারা যান। তাহার মৃত্যুর পরেই বিষয় লইয়া দেবরদের সঙ্গে মকদ্দমা বাধিয়া গেল । অবশেষে মামলায় অনেক সম্পত্তি নষ্ট করিয়া আমরা পৃথক হইলাম। "