পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোর। OLA মনোরমার বিবাহের সময় আলিল । পাছে তাহাকে দূরে লইয়। যায়, পাছে তাছাকে আর দেখিতে না পাই, এই ভয়ে পালসা হইতে পাঁচ-ছয় ক্রোশ তফাতে সিমুলে গ্রামে তাহার বিবাহ দিলাম। ছেলেটিকে কীর্তিকের মতো দেখিতে । যেমন রঙ তেমনি চেহারা— খাওয়াপরার সংগতিও তাঁহাদের ছিল । একদিন আমার যেমন অনাদর ও কষ্ট গিয়াছে, কপাল ভাঙিবার পূর্বে বিধাতা কিছু দিনের জন্ত আমাকে তেমনি স্থখ দিয়াছিলেন । শেষাশেষি আমার স্বামী আমাকে বড়োই আদর ও শ্রদ্ধা করিতেন, আমার সঙ্গে পরামর্শ না করিয়া কোনো কাজই করিতেন না । এত সৌভাগ্য আমার সহিবে কেন ? কলেরা হইয়া চারি দিনের ব্যবধানে আমার ছেলে এবং স্বামী মারা গেলেন । যে দুঃখ কল্পনা করিলেও অসহ বোধ হয় তাহাও যে মামুষের সয় ইহাই জানাইবার জন্ত ঈশ্বর আমাকে বাচাইয়া রাখিলেন । ক্রমেই জামাইয়ের পরিচয় পাইতে লাগিলাম । স্বন্দর ফুলের মধ্যে যে এমন কাল-সাপ লুকাইয়া থাকে তাহা কে মনে করিতে পারে ? সে যে কুসংসর্গে পড়িয়া নেশা ধরিয়াছিল তাহা আমার মেয়েও কোনোদিন আমাকে বলে নাই । জামাই যখন-তখন আসিয়া নানা অভাব জানাইয়া আমার কাছে টাকা চাহিয়া লইয়া যাইত । সংসারে আমার তো আর-কাহারও জন্য টাকা জমাইবার কোনো প্রয়োজন ছিল না, তাই জামাই যখন আবদার করিয়া আমার কাছ হইতে কিছু চাহিত সে আমার ভালোই লাগিত । মাঝে মাঝে আমার মেয়ে আমাকে বারণ করিত, আমাকে ভৎসনা করিয়া বলিত— তুমি অমনি করিয়া উহাকে টাকা দিয়া উহার অভ্যাস খারাপ করিয়া দিতেছ, টাকা হাতে পাইলে উনি কোথায় যে কেমন করিয়া উড়াইয়া দেন তাহার ঠিকানা নাই। আমি ভাবিতাম, তাহার স্বামী আমার কাছে এমন করিয়া টাকা লইলে তাহার শ্বশুরকুলের অগৌরব হইবে এই ভয়েই বুঝি মনোরম আমাকে টাকা দিতে নিষেধ করে । তখন আমার এমন বুদ্ধি হইল আমি আমার মেয়েকে লুকাইয়া জামাইকে নেশার কড়ি জোগাইতে লাগিলাম । মনোরমা যখন তাহা জানিতে পারিল তখন সে এক দিন আমার কাছে আসিয়া কাদিয়া তাহার স্বামীর কলঙ্কের কথা সমস্ত জানাইয়া দিল । তখন আমি কপাল চাপড়াইয়া মরি। দুঃখের কথা কী আর বলিব, আমার একজন দেওয়ই কুসঙ্গ এবং কুবুদ্ধি দিয়া আমার জামাইয়ের মাথা খাইয়াছে ।