পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী টাকা দেওয়া যখন বন্ধ করিলাম এবং জামাই যখন সন্দেহ করিল যে, আমার মেয়েই আমাকে নিষেধ করিয়াছে তখন তাহার আর কোনো আবরণ রহিল না। তখন সে এত অত্যাচার আরম্ভ করিল, আমার মেয়েকে পৃথিবীর লোকের সামনে এমন করিয়া অপমান করিতে লাগিল ষে, তাহাই নিবারণ করিবার জন্ত আবার আমি আমার মেয়েকে লুকাইয়া তাহাকে টাকা দিতে লাগিলাম । জানিতাম আমি তাহাকে রসাতলে দিতেছি, কিন্তু মনোরমাকে সে অসহ পীড়ন করিতেছে এ সংবাদ পাইলে আমি কোনোমতে স্থির থাকিতে পারিতাম না । অবশেষে এক দিন— সে দিনটা আমার স্পষ্ট মনে আছে । মাঘ মাসের শেষাশেষি, সে বছর সকাল সকাল গরম পড়িয়াছে, আমরা বলাবলি করিতেছিলাম এরই মধ্যে আমাদের খিড়কির বাগানের গাছগুলি আমের বোলে ভরিয়া গেছে । সেই মাঘের অপরাহ্লে আমাদের দরজার কাছে পালকি আসিয়া থামিল । দেখি, মনোরমা হাসিতে হাসিতে আসিয়া আমাকে প্ৰণাম করিল। আমি বলিলাম, কী মন্থ, তোদের খবর কী ? মনোরমা হাসিমুখে বলিল, খবর না থাকলে বুঝি মার বাড়িতে শুধু শুধু আসতে নেই ? আমার বেয়ান মন্দ লোক ছিলেন না । তিনি আমাকে বলিয়া পাঠাইলেন, বউমা পুত্রসম্ভাবিতা, সস্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত তাহার মার কাছে থাকিলেই ভালো। আমি ভাবিলাম, সেই কথাটাই বুঝি সত্য । কিন্তু জামাই যে এই অবস্থাতেই মনোরমাকে মারধোর করিতে আরম্ভ করিয়াছে এবং বিপংপাতের আশঙ্কাতেই বেয়ান তাহার পুত্রবধূকে আমার কাছে পাঠাইয়া দিয়াছেন তাহা আমি জানিতেও পারি নাই । মগ্ন এবং তাহার শাশুড়ীতে মিলিয়া আমাকে এমনি করিয়া ভুলাইয়া রাখিল ! মেয়েকে আমি নিজের হাতে তেল মাখাইয়া স্নান করাইতে চাহিলে মনোরমা নানা ছুতায় কাটাইয়া দিত ; তাহার কোমল অঙ্গে যে সব আঘাতের দাগ পড়িয়াছিল সে তাহা তাহার মায়ের দৃষ্টির কাছেও প্রকাশ করিতে চাহে নাই। জামাই মাঝে মাঝে আসিয়া মনোরমাকে বাড়ি ফিরাইয়া লইয়া ষাইবার জন্য গোলমাল করিত । মেয়ে আমার কাছে থাকাতে টাকার আবদার করিতে তাহার ব্যাঘাত ঘটিত । ক্রমে সে বাধাও আর সে মানিল না । টাকার জন্ত মনোরমার সামনেই আমার প্রতি উপদ্রব করিতে লাগিল । মনোরম জেদ করিয়া বলিত— কোনোমতেই টাকা দিতে পারিবে না। কিন্তু আমার বড়ো