পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা එ8` জিনিসপত্র আনিয়া কোন ঘর কে কী ভাবে ব্যবহার করিবে তাহ সমস্তই ঠিক করিয়া লইয়াছিল । শেষকালে তাহারা বলিল— তোমার ঠাকুর তুমি লইয়া যাইতে পারে, আমরা তাহাতে আপত্তি করিব না । যখন তাহাতেও আমি সংকোচ করিতে লাগিলাম তখন তাহারা কহিল— এখানে তোমার খাওয়াপরা চলিবে কী করিয়া ? আমি বলিলাম— কেন, তোমরা যা খোরাকি বরাদ করিয়াছ তাহাতেই আমার যথেষ্ট হইবে । তাহারা কহিল— কই, খোরাকির তো কোনো কথা নাই। তাহার পর আমার ঠাকুর লইয়া আমার বিবাহের ঠিক চৌত্রিশ বৎসর পরে এক দিন শ্বশুরবাড়ি হইতে বাহির হইয়া পড়িলাম। নীলুদাদার সন্ধান লইতে গিয়া শুনিলাম, তিনি আমার পূর্বেই বৃন্দাবনে চলিয়া গেছেন । গ্রামের তীর্থযাত্রীদের সঙ্গে আমি কাশীতে গেলাম। কিন্তু পাপমনে কোথাও শাস্তি পাইলাম না । ঠাকুরকে প্রতিদিন ডাকিয়া বলি, ঠাকুর, আমার স্বামী, আমার ছেলেমেয়ে আমার কাছে যেমন সত্য ছিল তুমি আমার কাছে তেমনি সত্য হয়ে ওঠে ! কিন্তু কই, তিনি তো আমার প্রার্থনা শুনিলেন না। আমার বুক ষে জুড়ায় না, আমার সমস্ত শরীর-মন ষে কাদিতে থাকে । বাপ রে বাপ ! মাহুষের প্রাণ কী কঠিন । সেই আট বৎসর বয়সে শ্বশুরবাড়ি গিয়াছি, তাহার পরে এক দিনের জন্তও বাপের বাড়ি আসিতে পাই নাই । তোমার মায়ের বিবাহে উপস্থিত্ত থাকিবার জন্ত অনেক চেষ্টা করিয়াছিলাম, কোনো ফল হয় নাই। তাহার পর বাবার চিঠিতে তোমাদের জন্মের সংবাদ পাইলাম, আমার বোনের মৃত্যুসংবাদও পাইয়াছি। মায়ের-কোল-ছাড়া তোদের ষে আমার কোলে টানিব, ঈশ্বর এপর্যন্ত এমন স্থযোগ ঘটান নাই । তীর্থে ঘুরিয়া যখন দেখিলাম মায়া এখনো মন ভরিয়া আছে, কোনোএকটা বুকের জিনিসকে পাইবার জন্য বুকের তৃষ্ণা এখনো মরে নাই— তখন তোদের খোজ করিতে লাগিলাম। শুনিয়াছিলাম তোদের বাপ ধর্ম ছাড়িয়া, সমাজ ছাড়িয়া বাহির হইয়া পড়িয়াছিলেন । তা কী করিব ! তোদের মা ষে আমার এক মায়ের পেটের বোন। কাশীতে এক ভদ্রলোকের কাছে তোমাদের খোজ পাইয়া এখানে আসিয়াছি। পরেশবাৰু শুনিয়াছি ঠাকুর দেবতা মানেন না, কিন্তু ঠাকুর ষে