পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ט\8ס\ স্বচরিতার সেবা তিনি সম্পূর্ণভাবেই গ্রহণ করিলেন। সতীশও দিদির অনুকরণে "মাসির রান্না খাইব’ বলিয়া ধরিয়া পড়িল । এমনি করিয়া এই তিনটিতে মিলিয়া পরেশবাবুর ঘরের কোণে আর-একটি ছোটো সংসার জমির উঠিল । কেবল ললিতা এই দুটি সংসারের মাঝখানে সেতুস্বরূপে বিরাজ করিতে লাগিল । বরদাসুন্দরী র্তাহার আর-কোনো মেয়েকে এ দিকে ঘেষিতে দিতেন না— কিন্তু ললিতাকে নিষেধ করিয়া পারিয়া উঠিবার শক্তি র্তাহার ছিল না । ro বরদাসুন্দরী তাহার ব্রান্ধিকাবন্ধুদিগকে প্রায়ই নিমন্ত্ৰণ করিতে লাগিলেন। মাঝে মাঝে তাহাদের ছাদের উপরেই সভা হইত । হরিমোহিনী তাহার স্বাভাবিক গ্রাম্য সরলতার সহিত মেয়েদের আদর-অভ্যর্থনা করিতে চেষ্টা করিতেন, কিন্তু ইহারা যে তাহাকে অবজ্ঞা করে তাহা তাহার কাছে গোপন রহিল না। এমন-কি, হিন্দুদের সামাজিক আচার ব্যবহার লইয়া তাহার সমক্ষেই বরদাসুন্দরী তীব্র সমালোচনা উত্থাপিত করিতেন এবং অনেক রমণী হরিমোহিনীর প্রতি বিশেষ লক্ষ রাখিয়া সেই সমালোচনায় যোগ দিতেন । স্নচরিতা তাহার মাসির কাছে থাকিয়া এই-সমস্ত আক্রমণ নীরবে সহ করিত । কেবল, সেও যে তাহার মাসির দলে ইহাই সে যেন গায়ে পড়িয়া প্রকাশ করিতে চেষ্টা করিত । যেদিন আহারের আয়োজন থাকিত সেদিন স্বচরিতাকে সকলে থাইতে ডাকিলে সে বলিত, “ন, আমি খাই নে ৷” "সে কী! তুমি বুঝি আমাদের সঙ্গে বসে থাবে না!" “না ।” বরদাসুন্দরী বলিতেন, “আজকাল স্বচরিতা ষে মস্ত হিছ হয়ে উঠেছেন, তা বুঝি জান না ? উনি যে আমাদের ছোওয়া থান না ।” “স্বচরিতাও হিঁচু হয়ে উঠল ! কালে কালে কতই যে দেখতে হবে তাই ভাবি ।” হরিমোহিনী ব্যস্ত হইয়া বলিয়া উঠিতেন, “রাধারানী মা, ৰাও মা ! তুমি খেতে যাও মা !” দলের লোকের কাছে যে স্বচরিতা তাহার জন্য এমন করিয়া খোটা খাইতেছে ইহা র্তাহার কাছে অত্যস্ত কষ্টকর হইয়া উঠিয়াছিল। কিন্তু স্বচরিতা অটল হইয়া থাকিত । একদিন কোনো ব্রাহ্ম মেয়ে কৌতুহলবশত হরিমোহিনীর ঘরের মধ্যে জুতা লইয়া