পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\5ჯo রবীন্দ্র-রচনাবলী পাল্লুবাবু, অমৃতাপকে নয়।” স্বচরিতা ঘরে প্রবেশ করিয়া পরেশবাবুর হাত ধরিয়া কহিল, “বাবা, তোমার উপাসনার সময় হয়েছে ।” পরেশবাবু কছিলেন, “পামুবাবু, তবে কি একটু বলবেন ?” হারানবাবু কহিলেন, “না।” বলিয়া দ্রুতপদে চলিয়া গেলেন । 8X একই সময়ে নিজের অস্তরের সঙ্গে, আবার নিজের বাহিরের সঙ্গে স্বচরিতার যে সংগ্রাম বাধিয়া উঠিয়াছে তাহাতে তাহাকে ভীত করিয়া তুলিয়াছে। গোরার প্রতি তাহার ষে মনের ভাব এতদিন তাহার অলক্ষ্যে বল পাইয়া উঠিয়াছিল এবং গোরার জেলে যাওয়ার পর হইতে যাহা তাহার নিজের কাছে সম্পূর্ণ স্বম্পষ্ট এবং দুৰ্নিবাররূপে দেখা দিয়াছে তাহা লইয়া সে ষে কী করিবে, তাহার পরিণাম যে কী, তাহা সে কিছুই ভাবিয়া পায় না— সে কথা কাহাকেও বলিতে পারে না, নিজের কাছে নিজে কুষ্ঠিত হইয়া থাকে। এই নিগূঢ় বেদনাটাকে লইয়া সে গোপনে বসিয়া নিজের সঙ্গে যে একটা বোঝাপড়া করিয়া লইবে তাহার সে নিভৃত অবকাশটুকুও নাই—হারানবাবু তাহার দ্বারের কাছে তাহাদের সমস্ত সমাজকে জাগ্ৰত করিয়া তুলিবার উপক্রম করিয়াছেন, এমন-কি ছাপার কাগজের ঢাকে ও কাঠি পড়িবার লক্ষণ দেখা যাইতেছে । ইহার উপরেও তাহার মাসির সমস্তা এমন হইয়া উঠিয়াছে যে অতিসত্বর তাহার একটা কোনো মীমাংসা না করিলে এক দিনও আর চলে না। স্বচরিতা বুঝিয়াছে এবার তাহার জীবনের একটা সন্ধিক্ষণ আসিয়াছে, চিরপরিচিত পথে চিরাভ্যস্ত নিশ্চিস্তভাৰে চলিবার দিন আর নাই । এই তাহার সংকটের সময় তাহার একমাত্র অবলম্বন ছিল পরেশবাৰু। তাহার কাছে সে পরামর্শ চাহে নাই, উপদেশ চাহে নাই ; অনেক কথা ছিল যাহা পরেশবাবুর সম্মুখে সে উপস্থিত করিতে পারিত না এবং এমন অনেক কথা ছিল যাহা লজ্জাকর হীনতাবশতই পরেশবাবুর কাছে প্রকাশের অযোগ্য। কেবল পরেশবাবুর জীবন, পরেশবাবুর সঙ্গমাত্র তাহাকে যেন নিঃশব্দে কোন পিতৃক্রোড়ে কোন মাতৃবক্ষে আকর্ষণ করিয়া লইত । এখন শীতের দিনে সন্ধ্যার সময় পরেশবাবু বাগানে যাইতেন না । বাড়ির পশ্চিম দিকের একটি ছোটো ঘরে মুক্ত দ্বারের সম্মুখে একখানি আসন পাতিয়া তিনি