পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 軸 e(�۹و পরেশবাবু কছিলেন, “তোমার মালির জন্তে আমি একটি বাড়ি ঠিক করে রেখেছি।” স্বচরিতা কহিল, "কিন্তু তিনি তো—” পরেশবাবু। ভাড়া দিতে পারবেন না। ভাড়া তিনি কেন দেবেন ? তুমি ভাড়া দেবে । । স্বচরিতা অবাক হইয়া পরেশবাবুর মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। পরেশবাবু হাসিয়া কহিলেন, “তোমারই বাড়িতে থাকতে দিয়ো, ভাড়া দিতে হবে না ।” স্বচরিতা আরও বিস্থিত হইল। পরেশবাবু কহিলেন, “কলকাতায় তোমাদের দুটো বাড়ি আছে জান না ! একটি তোমার, একটি সতীশের । মৃত্যুর সময়ে তোমার বাবা আমার হাতে কিছু টাকা দিয়ে যান। আমি তাই খাটিয়ে বাড়িয়ে তুলে কলকাতায় দুটো বাড়ি কিনেছি। এত দিন তার ভাড়া পাচ্ছিলুম, তাও জমছিল । তোমার বাড়ির ভাড়াটে অল্পদিন হল উঠেও গেছে— সেখানে তোমার মাসির থাকবার কোনো অসুবিধা হবে না ।” সুচরিতা কহিল, “সেখানে তিনি কি একলা থাকতে পারবেন ?” পরেশবাবু কহিলেন, “তোমরা তার আপনার লোক থাকতে তাকে একলা থাকতে হবে কেন ?” স্বচরিতা কহিল, “সেই কথাই তোমাকে বলবার জন্তে আজ এসেছিলুম। মাগি চলে যাবার জন্তে প্রস্তুত হয়েছেন, আমি ভাবছিলুম আমি একলা কী করে তাকে যেতে দেব । তাই তোমার উপদেশ নেব বলে এসেছি । তুমি যা বলবে আমি তাই করব ।” পরেশবাবু কহিলেন, “আমাদের বাসার গায়েই এই-যে গলি, এই গলির দুটোতিনটে বাড়ি পরেই তোমার বাড়ি— ওই বারান্দায় দাড়ালে সে বাড়ি দেখা যায়। সেখানে তোমরা থাকলে নিতান্ত অরক্ষিত অবস্থায় থাকতে হবে না । আমি তোমাদের দেখতে শুনতে পারব ।” স্বচরিতার বুকের উপর হইতে একটা মস্ত পাথর নামিয়া গেল। ‘বাবাকে ছাড়িয়া কেমন করিয়া যাইব’ এই চিস্তার সে কোনো অবধি পাইতেছিল না । কিন্তু যাইতেই হইবে ইহাও তাহার কাছে নিশ্চিত হইয়া উঠিয়াছিল। স্বচরিতা আবেগপরিপূর্ণ হৃদয় লইয়া চুপ কবিয়া পরেশবাবুর কাছে বসিয়া রহিল। পরেশবাবুও স্তন্ধ হইয়া নিজের অস্তকরণের মধ্যে নিজেকে গভীরভাবে নিহিত করিয়া বলিয়া রছিলেন। স্বচরিতা তাহার শিষ্যা, তাহার কন্যা, তাহার স্বহৃদ ।