পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6%ांद्र \9A:S তাহাকে প্রশস্ত ক্ষেত্রে মুক্ত করিয়া দেওয়া । তিনি জানিতেন অল্পদিনের মধ্যে স্বচরিতাকে আশ্রয় করিয়া এই ছোটো পরিবারটির মধ্যে যে-সকল অপ্রত্যাশিত সমাবেশ ঘটিয়াছে তাহা এখানকার বাধা সংস্কারকে পীড়িত, করিতেছে, তাহাকে এখানে ধরিয়া রাখিবার চেষ্টা না করিয়া মুক্তিদান করিলেই তবেই স্বভাবের সহিত সামঞ্জস্ত ঘটিয়া সমস্ত শাস্ত হইতে পরিবে । ইহা জানিয়া বাহাতে সহজে সেই শাস্তি ও সামঞ্জস্ত ঘটিতে পারে নীরবে তাহারই আয়োজন করিতেছিলেন । দুই জনে কিছুক্ষণ চুপ করিয়া বলিয়া থাকিতে ঘড়িতে এগারোটা বাজিয়া গেল । তখন পরেশবাবু উঠিয়া দাড়াইয়া স্বচরিতার হাত ধরিয়া তাহাকে গাড়িবারান্দার ছাদে লইয়া গেলেন। সন্ধ্যাকাশের বাষ্প কাটিয়া গিয়া তখন নির্মল অন্ধকারের মধ্যে তারাগুলি দীপ্তি পাইতেছিল । স্বচরিতাকে পাশে লইয়া পরেশ সেই নিস্তন্ধ রাত্রে প্রার্থনা করিলেন– সংসারের সমস্ত অসত্য কাটিয়া পরিপূর্ণ সত্য আমাদের জীবনের মাঝখানে নির্মল মূর্তিতে উদ্ভাসিত হইয়া উঠুন। 8ર পরদিন প্রাতে হরিমোহিনী ভূমিষ্ঠ হইয়া পরেশকে প্রণাম করিতেই তিনি ব্যস্ত হইয়া সরিয়া গিয়া কহিলেন, “করেন কী ?” হরিমোহিনী আশ্রনেত্ৰে কহিলেন, "তোমার ঋণ আমি কোনো জন্মে শোধ করতে পারব না। আমার মতো এত বড়ো নিরুপায়ের তুমি উপায় করে দিয়েছ, এ তুমি ভিন্ন আর কেহ করতে পারত না । ইচ্ছা করলেও আমার ভালো কেউ করতে পারে না এ আমি দেখেছি— তোমার উপর ভগবানের খুব অনুগ্রহ আছে তাই তুমি আমার মতো লোকের উপরেও অনুগ্রহ করতে পেরেছ।” পরেশবাবু অত্যন্ত সংকুচিত হইয়া উঠিলেন ; কহিলেন, “আমি বিশেষ কিছুই করি নি— এ-সমস্ত রাধারানী—“ হরিমোহিনী বাধা দিয়া কছিলেন, “জানি জানি— কিন্তু রাধারানীই ষে তোমার— ও যা করে সে ষে তোমারই করা । ওর যখন মা গেল, ওর বাপও রইল না, তখন ভেবেছিলুম মেয়েট বড়ো দুর্ভাগিনী— কিন্তু ওর দুঃখের কপালকে ভগবান ষে এমন ধন্ত করে তুলবেন তা কেমন করে জানব বলে । দেখো, ঘুরে ফিরে শেষে আজ তোমার দেখা যখন পেয়েছি তখন বেশ বুঝতে পেরেছি ভগবান আমাকেও দয়া করেছেন ।”