পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা צה"ס হওয়াতে আমি যে কত খুশি হয়েছি সে আর কী বলব মা ! তোমাদের এই ঘরে যে এমন করে বিনয়ের মন বসেছে তাতে ওর ভারি উপকার হয়েছে। সে কথা ও খুব বোঝে আর স্বীকার করতেও ছাড়ে না ।” ললিতা একটা কিছু উত্তর করিবার চেষ্টা করিয়াও কথা খুঁজিয়া পাইল না, তাহার মুখ লাল হইয়া উঠিল। স্বচরিত ললিতার বিপদ দেখিয়া কহিল, “সকল মানুষের ভিতরকার ভালোটি বিনয়বাবু দেখতে পান, এইজন্যই সকল মামুষের যেটুকু ভালো সেটুকু ওঁর ভোগে আসে । সে অনেকটা ওঁর গুণ ৷” বিনয় কহিল, “মা, তুমি বিনয়কে যত বড়ো আলোচনার বিষয় বলে ঠিক করে রেখেছ সংসারে তার তত বড়ো গৌরব নেই। এ কথাটা তোমাকে বোঝাব মনে করি, নিতান্তু অহংকারবশতই পারি নে। কিন্তু আর চলল না । মা, আর নয়, বিনয়ের কথা আজ এই পর্যন্ত ।” এমন সময় সতীশ তাহার অচিরজাত কুকুর-শাবকটাকে বুকে চাপিয়া ধরিয়া লাফাইতে লাফাইতে আসিয়া উপস্থিত হইল। হরিমোহিনী ব্যস্তসমস্ত হইয়া বলিয়া উঠিলেন, “বাবা সতীশ, লক্ষ্মী বাপ আমার, ও কুকুরটাকে নিয়ে যাও বাবা ” সতীশ কহিল, “ও কিছু করবে না মাসি ! ও তোমার ঘরে যাবে না। তুমি ওকে একটু আদর করে, ও কিছু বলবে না ।” হরিমোহিনী সরিয়া গিয়া কহিলেন, “না বাবা, না, ওকে নিয়ে যাও।” তখন আনন্দময়ী কুকুর-মৃদ্ধ সতীশকে নিজের কাছে টানিয়া লইলেন । কুকুরকে কোলের উপর লইয়া সতীশকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি সতীশ না ? আমাদের বিনয়ের বন্ধু ?” বিনয়ের বন্ধু বলিয়া নিজের পরিচয়কে সতীশ কিছুই অসংগত মনে করিত না, স্বতরাং সে অসংকোচে বলিল, “হ ।” বলিয়া আনন্দময়ীর মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। আনন্দময়ী কহিলেন, “আমি যে বিনয়ের মা হই ।” কুকুর-শাবক আনন্দময়ীর হাতের বালা চর্বনের চেষ্টা করিয়া আত্মবিনোদনে প্রবৃত্ত হইল । স্বচরিতা কহিল, "বক্তিয়ার, মাকে প্রণাম কর।” সতীশ লজ্জিতভাবে কোনোমতে প্রণামটা সারিয়া লইল । এমন সময়ে বরদাসুন্দরী উপরে আসিয়া হরিমোহিনীর দিকে দৃকপাতমাত্র না করিয়া আনন্দময়ীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনি কি আমাদের এখানে কিছু খাবেন ?” -