পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী טרס ছিড়ে ভেসে চলে যাবার উপক্রম করছে। এতে যে শুধু আপনারই অনুতাপের কারণ ঘটবে তা নয়, এতে ব্রাহ্মসমাজেরও অগৌরবের কথা আছে।” পরেশবাবু কহিলেন, “নিন্দ করতে গেলে বাইরে থেকে করা যায়, কিন্তু বিচার করতে গেলে ভিতরে প্রবেশ করতে হয় । কেবল ঘটনা থেকে মানুষকে দোষী করবেন না ।” হারানবাবু কহিলেন, "ঘটনা শুধু শুধু ঘটে না, তাকে আপনার ভিতরের থেকেই ঘটিয়ে তুলেছেন। আপনি এমন সব লোককে পরিবারের মধ্যে আত্মীয়ভাবে টানছেন যারা আপনার পরিবারকে আপনার আত্মীয়সমাজ থেকে দূরে নিয়ে যেতে চায়। দূরেই তো নিয়ে গেল, সে কি আপনি দেখতে পাচ্ছেন না ?” পরেশবাবু একটু বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “আপনার সঙ্গে আমার দেখবার প্রণালী মেলে না ।” হারানবাবু কহিলেন, “আপনার না মিলতে পারে। কিন্তু আমি স্বচরিতাকেই সাক্ষী মানছি, উনিই সত্য করে বলুন দেখি, ললিতার সঙ্গে বিনয়ের যে সম্বন্ধ দাড়িয়েছে সে কি শুধু বাইরের সম্বন্ধ ? তাদের অন্তরকে কোনোখানেই স্পর্শ করে নি ? না স্বচরিতা, তুমি চলে গেলে হবে না— এ কথার উত্তর দিতে হবে । এ গুরুতর কথা।" স্বচরিতা কঠোর হইয়া কহিল, “ষতই গুরুতর হোক এ কথায় আপনার কোনো অধিকার নেই।” হারানবাবু কহিলেন, “অধিকার না থাকলে আমি যে শুধু চুপ করে থাকতুম তা নয়, চিন্তাও করতুম না । সমাজকে তোমরা গ্রাহ না করতে পার, কিন্তু যতদিন সমাজে আছ ততদিন সমাজ তোমাদের বিচার করতে বাধ্য ।” ললিত ঝড়ের মতো ঘরে প্রবেশ করিয়া কহিল, "সমাজ যদি আপনাকেই বিচারক পদে নিযুক্ত করে থাকেন তবে এ সমাজ থেকে নির্বাসনই আমাদের পক্ষে শ্রেয় ।” হারানবাবু চৌকি হইতে উঠিয়া দাড়াইয়া কহিলেন, “ললিত, তুমি এসেছ আমি খুশি হয়েছি । তোমার সম্বন্ধে যা নালিশ তোমার সামনেই তার বিচার হওয়া উচিত।” ক্ৰোধে স্বচরিতার মুখ চক্ষু প্ৰদীপ হইয়া উঠিল, সে কহিল, "হারানবাবু, আপনার ঘরে গিয়ে আপনার বিচারশাল। আহবান করুন । গৃহস্থের ঘরের মধ্যে চড়ে তাদের অপমান করবেন আপনার এ অধিকার আমরা কোনোমতেই মানব না। আয় ভাই ললিতা !” ললিতা এক পা নড়িল না ; কহিল, “না দিদি, আমি পালাব না । *ॉश्वांबूद्र याকিছু বলবার আছে সব আমি শুনে যেতে চাই। বলুন কী বলবেন, বলুন।" হারানবাবু থমকিয় গেলেন। পরেশবাবু কহিলেন, “মা ললিতা, আজ স্বচরিতা