পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা ○b"(2 ছাত্রীদের সম্পূর্ণ তিরোধান দেখিয়া, স্বচরিতা ব্যাপারখানা কী এবং কাহার দ্বারা ঘটতেছে তাহা বুঝিতে পারিয়াছিল। সে এ সম্বন্ধে কোনো কথাটি না কহিয়া উপরের ঘরে সতীশকে তাহার আসন্ন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করিতেছিল । স্বধীরের সঙ্গে কথা কহিয়া ললিতা স্বচরিতার কাছে গেল, কছিল, “শুনেছ ?” স্বচরিতা একটু হাসিয়া কহিল, “শুনি নি ; কিন্তু সব বুঝেছি।” ললিত কহিল, "এ-সব কি সহ করতে হবে ?” স্বচরিতা ললিতার হাত ধরিয়া কহিল, “সহ করাতে তো অপমান নেই । বাবা কেমন করে সব সহ করেন দেখেছিল তো ?” r ললিতা কহিল, “কিন্তু স্বচিদিদি, আমার অনেক সময় মনে হয় সহ করার স্বারা অন্যায়কে যেন স্বীকার করে নেওয়া হয় । অন্যায়কে সহ না করাই হচ্ছে তার প্রতি উচিত ব্যবহার ।” স্বচরিত কহিল, “তুই কী করতে চাস ভাই বল ।” ললিত কহিল, “তা আমি কিছু ভাবি নি— আমি কী করতে পারি তাও জানি নে – কিন্তু একটা-কিছু করতেই হবে । আমাদের মতো মেয়েমানুষের সঙ্গে এমন নীচভাবে যারা লেগেছে তারা নিজেদের যত বড়ো লোক মনে করুক তারা কাপুরুষ । কিন্তু তাদের কাছে আমি কোনোমতেই হার মানব না— কোনোমতেই না । এতে তারা যা করতে পারে করুক ।” বলিয়া ললিতা মাটিতে পদাঘাত করিল । সুচরিতা কোনো উত্তর না করিয়া ধীরে ধীরে ললিতার হাতের উপর হাত বুলাইতে লাগিল। কিছুক্ষণ পরে কহিল, “ললিতা, ভাই, একবার বাবার সঙ্গে কথা কয়ে দেখ ।” ললিত উঠিয়া দাড়াইয়া কহিল, “আমি এখনই তার কাছেই যাচ্ছি।” ললিতা তাহাদের বাড়ির দ্বারের কাছে আসিয়া দেখিল নতশিরে বিনয় বাহির হইয়া আসিতেছে। ললিতাকে দেখিয়া বিনয় মুহূর্তের জন্য থমকিয়া দাড়াইল— ললিতার সঙ্গে দুই-একটা কথা কহিয়া লইবে কি না সে সম্বন্ধে তাহার মনে একটা বিতর্ক উপস্থিত হইল— কিন্তু আত্মসম্বরণ করিয়া ললিতার মুখের দিকে না চাহিয়া তাহাকে নমস্কার করিল ও মাথা হেঁট করিয়াই চলিয়া গেল । ললিতাকে যেন অগ্নিতপ্ত শেলে বিদ্ধ করিল। সে দ্রুতপদে বাড়িতে প্রবেশ করিয়াই একেবারে তাহার ঘরে গেল । তাহার মা তখন টেবিলের উপর একটা লম্বা সরু খাতা খুলিয়া হিসাবে মনোনিবেশ করিবার চেষ্টা করিতেছিলেন । ললিতার মুখ দেখিয়াই বরদাসুন্দরী মনে শঙ্কা গনিলেন। তাড়াতাড়ি হিসাবের