পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী واعC)bا খাতাটার মধ্যে একেবারে নিরুদ্দেশ হইয়া যাইবার প্রয়াস পাইলেন– যেন একটা কী অঙ্ক আছে যাহা এখনই মিলাইতে না পারিলে তাহার সংসার একেবারে ছারখার হইয়া যাইবে । ললিতা চৌকি টানিয়া টেবিলের কাছে বসিল । তবু বরদাসুন্দরী মুখ তুলিলেন না । ললিত কহিল, “মা !” বরদাসুন্দরী কহিলেন, “রোস বাছা, আমি এই—” বলিয়া খাতাটার প্রতি নিতান্ত ঝু কিয়া পড়িলেন । ললিত কহিল, “আমি বেশিক্ষণ তোমাকে বিরক্ত করব না। একটা কথা জানতে চাই । বিনয়বাবু এসেছিলেন ?” বরদাসুন্দরী খাতা হইতে মুখ না তুলিয়া কহিলেন, “ই ।” ললিতা । তার সঙ্গে তোমার কী কথা হল ? “সে অনেক কথা ।” ললিত । আমার সম্বন্ধে কথা হয়েছিল কি না ? বরদাসুন্দরী পলায়নের পন্থা না দেখিয়া কলম ফেলিয়। পতি। হইতে মুখ তুলিয়। কহিলেন, “তা বাছ, হয়েছিল । দেখলুম যে ক্রমেই বাড়াবাড়ি হয়ে পড়ছে— সমাজের লোকে চার দিকেই নিন্দে করছে, তাই সাবধান করে দিতে হল ।” লজ্জায় ললিতার মুখ লাল হইয়া উঠিল, তাহার মাথা ক বা করিতে লাগিল । জিজ্ঞাসা করিল, “বাবা কি বিনয়বাবুকে এখানে আসতে নিষেধ করেছেন ?” বরদাসুন্দরী কহিলেন, “তিনি বুঝি এ-সব কথা ভাবেন ? যদি ভাবতেন তা হলে গোড়াতেই এ-সমস্ত হতে পারত না ।” ললিত জিজ্ঞাসা করিল, “পাল্লুবাবু আমাদের এখানে আসতে পারবেন ?" বরদাসুন্দরী আশ্চর্য হইয়া কহিলেন, “শোনো একবার পাছবাৰু আসবেন না কেন ?” 臀 ললিতা। বিনয়বাবুই বা আসবেন না কেন ? বরদাসুন্দরী পুনরায় খাত টানিয়া লইয়া কহিলেন, “ললিতা, তেীর সঙ্গে আমি পারি নে বাপু ! যা, এখন আমাকে জালাল নে— আমার অনেক কাজ আছে।” ললিত দুপুরবেলায় স্বচরিতার বাড়িতে ইস্কুল করিতে যায় এই অবকাশে বিনয়কে ডাকাইয়া আনিয়া বরদাসুন্দরী র্তাহার যাহা বক্তব্য বলিয়াছিলেন । মনে করিয়াছিলেন, ললিতা টেরও পাইবে না । হঠাৎ চক্রাস্ত এমন করিয়া ধরা পড়িল দেখিয়া তিনি বিপদ বোধ করিলেন। বুঝিলেন, পরিণামে ইহার শাস্তি নাই এবং সহজে ইহার