পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা එbr> তাহার পরে পরেশের দরজা পার হইয়াই প্রথমেই যেই সে ললিতাকে দেখিতে পাইল তাহার মনে হইল “ললিতার নিকট হইতে এই শেষ-বিদায়ের মুহূর্তে তাহার কাছে একটা মস্ত অপমান স্বীকার করিয়া লইয়া পূর্বপরিচয়ের একটা প্রলয় সমাধান করিয়া দিয়া যাই – কিন্তু কী করিলে তাহা হয় ভাবিয়া পাইল না ; তাই ললিতার মুখের দিকে না চাহিয়া নিঃশব্দে একটি নমস্কার করিয়া চলিয়া গেল । এই তো সেদিন পর্যন্ত বিনয় পরেশের পরিবারের বাহিরেই ছিল— আজও সেই বাহিরে আসিয়া দাড়াইল । কিন্তু এ কী প্রভেদ ! সেই বাহির আজ এমন শূন্ত কেন ? তাহার পূর্বের জীবনে তো কোনো ক্ষতি হয় নাই— তাহার গোরা, তাহার আনন্দময়ী তো আছে। কিন্তু তবু তাহার মনে হইতে লাগিল মাছ যেন জল হইতে ডাঙায় উঠিয়াছে— যে দিকে ফিরিতেছে কোথাও সে যেন জীবনের অবলম্বন পাইতেছে না । এই হর্ম্যসংকুল শহরের জনাকীর্ণ রাজপথে বিনয় সর্বত্রই নিজের জীবনের একট। ছায়াময় পাণ্ডুবৰ্ণ সর্বনাশের চেহারা দেখিতে লাগিল। এই বিশ্বব্যাপী শুষ্কতায় শূন্যতায় সে নিজেই আশ্চর্য হইয়া গেল । কেন এমন হইল, কখন এমন হইল, কী করিয়া এ সম্ভব হইল, এই কথাই সে একটা হদয়হীন নিরুত্তর শূন্যের কাছে বার বার প্রশ্ন করিতে লাগিল । “বিনয়বাবু বিনয়ুবাবু!” বিনয় পিছন ফিরিয়া দেখিল, সতীশ । তাহাকে বিনয় আলিঙ্গন করিয়া ধরিল। কহিল, "কী ভাই, কী বন্ধু !” বিনয়ের কণ্ঠ যেন অশ্রুতে ভরিয়া আসিল । পরেশবাবুর ঘরে এই বালকটিও ষে কতখানি মাধুর্য মিশাইয়াছিল তাহা বিনয় আজ যেমন অনুভব করিল এমন বুঝি কোনো দিন করে নাই । সতীশ কহিল, “আপনি আমাদের ওখানে কেন যান না ? কাল আমাদের ওখানে লাবণ্যদিদি ললিতাদিদি খাবেন, মাসি আপনাকে নেমস্তন্ন করবার জন্যে পাঠিয়ে ছেন ।” বিনয় বুঝিল মাগি কোনো খবর রাখেন না। কহিল, “সতীশবাবু, মাসিকে আমার প্রণাম জানিয়ো— কিন্তু আমি তো যেতে পারব না।” সতীশ অনুনয়ের সহিত বিনয়ের হাত ধরিয়া কহিল, "কেন পারবেন না ? আপনাকে যেতেই হবে, কিছুতেই ছাড়ব না।” সতীশের এত অনুরোধের বিশেষ একটু কারণ ছিল । তাহার ইস্কুলে “পশুর প্রতি ব্যবহার” লম্বন্ধে তাহাকে একটি রচনা লিখিতে দিয়াছিল, সেই রচনায় সে পঞ্চাশের মধ্যে বিশ্বাল্লিশ নম্বর পাইয়াছিল— তাহার ভারি ইচ্ছা বিনয়কে সেই লেখাটা