পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S)e রবীন্দ্র-রচনাবলী দেখায়। বিনয় যে খুব এক জন বিদ্বান এবং সমজদার তাহা সে জানিত ; সে নিশ্চয় ঠিক করিয়াছিল বিনয়ের মতে রসজ্ঞ লোক তাহার লেখার ঠিক মূল্য বুঝিতে পারিবে । বিনয় যদি তাহার লেখার শ্রেষ্ঠতা স্বীকার করে তাহা হইলে অরলিক লীলা সতীশের প্রতিভা সম্বন্ধে অবজ্ঞা প্রকাশ করিলে আশ্রদ্ধেয় হইবে । নিমন্ত্রণটা মাসিকে বলিয়া সেই ঘটাইয়াছিল— বিনয় যখন তাহার লেখার উপরে রায় প্রকাশ করিবে তখন তাহার দিদিরাও সেখানে উপস্থিত থাকে ইহাই তাহার ইচ্ছা । বিনয় কোনোমতেই নিমন্ত্রণে উপস্থিত হইতে পরিবে না শুনিয়া সতীশ অত্যন্ত মুম্বড়িয়া গেল । বিনয় তাহার গলা জড়াইয়া ধরিয়া কহিল, “সতীশবাবু, তুমি আমাদের বাড়ি চলো ।” সতীশের পকেটেই সেই লেখাটা ছিল, সুতরাং বিনয়ের আহবান সে অগ্রাহ করিতে পারিল না । কবিযশ:প্রার্থী বালক তাহাদের বিদ্যালয়ের আসন্ন পরীক্ষার সময়ে সময় নষ্ট করার অপরাধ স্বীকার করিয়াই বিনয়ের বাসায় গেল । বিনয় যেন তাহাকে কোনোমতেই ছাড়িতে চাহিল না । তাহার লেখা তো শুনিলই– প্রশংসা যাহা করিল তাহাতে সমালোচকের অপ্ৰমত্ত নিরপেক্ষতা প্রকাশ পাইল না । তাহfর উপরে বাজার হইতে জলখাবার কিনিয়া তাহাকে খাওয়াইল । তাহার পরে সতীশকে তাহীদের বাড়ীর কাছাকাছি পৌছাইয়া দিয়া অনাবশ্যক ব্যাকুলতার সহিত কহিল, “সতীশবাবু, তবে আসি ভাই ।” সতীশ তাহার হাত ধরিয়া টানাটানি করিয়া কহিল, "না, আপনি আমাদের বাড়িতে আসুন ।” আজ এ অনুনয়ে কোনো ফল হইল না । স্বপ্নাবিষ্ট্রের মতো চলিতে চলিতে বিনয় আনন্দময়ীর বাড়ীতে আসিয়া পৌছিল, কিন্তু তাহার সঙ্গে দেখা করিতে পারিল না । ছাতের উপরে যে ঘরে গোরা শুইত সেই নির্জন ঘরে প্রবেশ করিল— এই ঘরে তাহদের বাল্যবন্ধুত্বের কত স্থখময় দিন এবং কত মুখময় রাত্রি কাটিয়াছে ; কত আনন্দালাপ, কত সংকল্প, কত গভীর বিষয়ের আলোচনা ; কত প্রণয়কলহ এবং সে কলহের কত প্রতিস্থধাপূর্ণ অবসান ! সেই তাহার পূর্বজীবনের মধ্যে বিনয় তেমনি করিয়া আপনাকে ভুলিয়া প্রবেশ করিতে চাহিল— কিন্তু মাঝখানের এই কয়দিনের নূতন পরিচয় পথরোধ করিয়া দাড়াইল, তাহাকে ঠিক সেই জায়গাটিতে ঢুকিতে দিল না। জীবনের কেন্দ্র যে কখন সরিয়া আসিয়াছে এবং কক্ষপথের যে কখন পরিবর্তন ঘটিয়াছে তাহা এতদিন বিনয় সুস্পষ্ট করিয়া