পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩১২ রবীন্দ্র-রচনাবলী বিনয় হঠাৎ বলিয়া উঠিল, “মা, শশিমুখীর সঙ্গে আমার বিবাহের যে প্রস্তাব হয়েছিল সেটা হয়ে চুকে গেলেই ভালো হত। আমার যেখানে ঠিক জায়গা সেইখানেই কোনোমতে আমার বদ্ধ হয়ে থাকা উচিত— এমন হওয়া উচিত যে কিছুতেই সেখান থেকে আর নড়তে না পারি ” আনন্দময়ী হাসিয়া কহিলেন, “অর্থাৎ, শশিমুখীকে তোর ঘরের বউ না করে তোরা ঘরের শিকল করতে চাল— শশীর কী সুখেরই কপাল !” এমন সময় বেহারা আসিয়া খবর দিল, পরেশবাবুর বাড়ির দুই মেয়ে আসিয়াছেন । শুনিয়া বিনয়ের বুকের মধ্যে ধড়াস করিয়া উঠিল। তাহার মনে হইল, বিনয়কে সতর্ক করিয়া দিবার জন্য তাহারা আনন্দময়ীর কাছে নালিশ জানাইতে আলিয়াছে। সে একেবারে দাড়াইয়া উঠিয়া কহিল, “আমি যাই মা !” আনন্দময়ী উঠিয়া দাড়াইয়া তাহার হাত ধরিয়া কহিলেন, “একেবারে বাড়ি ছেড়ে যাস নে বিনয় ! নীচের ঘরে একটু অপেক্ষা কর।” নীচে যাইতে যাইতে বিনয় বার বার বলিতে লাগিল, "এর তো কোনো দরকার ছিল না । ষা হয়ে গেছে তা হয়ে গেছে, কিন্তু আমি তো মরে গেলেও আর সেখানে যেতুম না । অপরাধের শাস্তি আগুনের মতো যখন একবার জলে ওঠে তখন অপরাধী দগ্ধ হয়ে ম’লেও সেই শাস্তির আগুন যেন নিবতেই চায় না।’ একতলায় রাস্তার ধারে গোরীর যে ঘর ছিল সেই ঘরে বিনয় যখন প্রবেশ করিতে যাইতেছে এমন সময় মহিম তাহার স্ফীত উদরটিকে চাপকৰ্ণনের বোতাম-বন্ধন হইতে মুক্তি দিতে দিতে আপিস হইতে বাড়ি ফিরিয়া আসিলেন । বিনয়ের হাত ধরিয়া কহিলেন, “এই-বে বিনয় ! বেশ ! আমি তোমাকে খুঁজছি।” বলিয়া বিনয়কে গোরার ঘরের মধ্যে লইয়া গিয়া একটা চেকিতে বসাইয়া নিজেও বসিলেন এবং পকেট হইতে ডিবা বাহির করিয়া বিনয়কে একটি পান থাইতে ছিলেন । "ওরে তামাক নিয়ে আয় রে” বলিয়া একটা হুংকার দিয়া তিনি একেবারেই কাজের কথা পাড়িলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন, “সেই বিষয়টার কী স্থির হল ? আর তো—” দেখিলেন বিনয়ের ভাবধান পূর্বের চেয়ে অনেকটা নরম । খুব যে একটা উৎসাহ তাহা নয় বটে, কিন্তু ফাকি দিয়া কোনোমতে কথাটাকে এড়াইবার চেষ্টাও দেখা যায় না । মহিম তখনই দিন ক্ষণ একেবারে পাকা করিতে চান ; বিনয় কছিল, “গোরা ফিরে আমুক-না ।” মহিম আশ্বস্ত হইয়া কছিলেন, “লে তো আর দিন কয়েক আছে। বিন, কিছু