পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రీపీట রবীন্দ্র-রচনাবলী ভালোই হয়। বরঞ্চ শশিমুখীর বিয়েট হয়ে গেলে তার পরে আমাদের ভালোর চিন্তা কোরে । কী বল ?” আনন্দময়ী ইহার পরে কোনো উত্তর না করিয়া একটি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন এবং মহিম পকেটের ডিবা হইতে একটি পান বাহির করিয়া চিবাইতে চিবাইতে চলিয়া গেলেন । ט\8 ললিতা পরেশবাবুকে আসিয়া কহিল, “আমরা ব্রাহ্ম বলে কোনো হিন্দু মেয়ে আমাদের কাছে পড়তে আসতে চায় না— তাই মনে করছি হিন্দুসমাজের কাউকে এর মধ্যে রাখলে কাজের সুবিধা হবে । কী বল বাবা ?” পরেশবাৰু জিজ্ঞাসা করিলেন, “হিন্দুসমাজের কাউকে পাবে কোথায় ?” ললিতা খুব কোমর বাধিয়া আসিয়াছিল বটে, তবু বিনয়ের নাম করিতে হঠাৎ তাহার সংকোচ উপস্থিত হইল ; জোর করিয়া সংকোচ কাটাইয়া কহিল, "কেন, তা কি পাওয়া যাবে না ? এই-যে বিনয়বাবু আছেন— কিম্বা-” এই কিম্বাট নিতান্তই একটা ব্যর্থ প্রয়োগ, অব্যয় পদের অপব্যয় মাত্র । এটা অসমাপ্তই রহিয়া গেল । পরেশ কহিলেন, “বিনয় ! বিনয় রাজি হবেন কেন ?” ললিতার অভিমানে আঘাত লাগিল । বিনয়বাবু রাজি হবেন না । ললিত এটুকু বেশ বুঝিয়াছে, বিনয়বাবুকে রাজি করানো ললিতার পক্ষে অসাধ্য নহে । ললিত কহিল, “তা তিনি রাজি হতে পারেন ।” পরেশ একটু স্থির হইয়া বসিয়া থাকিয়া কহিলেন, “সব কথা বিবেচনা করে দেখলে কখনোই তিনি রাজি হবেন না ।” ললিতার কর্ণমূল লাল হইয়া উঠিল । সে নিজের আঁচলে বাধা চাবির গোছা লইয়া নাড়িতে লাগিল । তাহার এই নিপীড়িত কস্তার মুখের দিকে তাকাইয়া পরেশের হৃদয় ব্যথিত হইয়া উঠিল । কিন্তু কোনো সান্থনার বাক্য খুজিয়া পাইলেন না । কিছুক্ষণ পরে আস্তে আস্তে ললিতা মুখ তুলিয়া কছিল, “বাবা, তা হলে আমাদের এই ইস্কুলটা কোনোমতেই হতে পারবে না !” পরেশ কহিলেন, “এখন হওয়ার অনেক বাধা দেখতে পাচ্ছি । চেষ্টা করতে গেলেই বিস্তর অপ্রিয় আলোচনাকে জাগিয়ে তোলা হবে ।”