পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\రీఎbr রবীন্দ্র-রচনাবলী হৃদয় ব্যথিত হইয়া উঠিল । কী লইয়া তাহার চিন্তা তাহাও সে জানে এবং এই চিন্তা লইয়াই স্বচরিতা কয়দিন উদবিগ্ন হইয়া রহিয়াছে । পরেশবাবু স্বচরিতাকে লইয়া নিভৃত ঘরে বসিলেন এবং কছিলেন, "মা, ললিত সম্বন্ধে ভাবনার সময় উপস্থিত হয়েছে।” স্বচরিতা পরেশবাবুর মুখে তাহার করুণাপূর্ণ দৃষ্টি রাখিয়া কছিল, “জানি বাবা!” পরেশবাবু কহিলেন, “আমি সামাজিক নিন্দার কথা ভাবছি নে। আমি ভাবছি— আচ্ছা, ললিতা কি—” পরেশের সংকোচ দেখিয়া স্বচরিতা আপনিই কথাটাকে স্পষ্ট করিয়া লইতে চেষ্টা করিল। সে কহিল, “ললিতা বরাবর তার মনের কথা আমার কাছে খুলে বলে । কিন্তু কিছুদিন থেকে সে আমার কাছে আর তেমন ক’রে ধর দেয় না । আমি বেশ বুঝতে পারছি—” পরেশ মাঝখান হইতে কহিলেন, "ললিতার মনে এমন কোনো ভাবের উদয় হয়েছে যেটা সে নিজের কাছেও স্বীকার করতে চাচ্ছে না । আমি ভেবে পাচ্ছি নে কী করলে ওর ঠিক— তুমি কি বল বিনয়কে আমাদের পরিবারে যাতায়াত করতে দিয়ে ললিতার কোনো অনিষ্ট করা হয়েছে ?” স্বচরিতা কহিল, “বাবা, তুমি তে জান বিনয়বাবুর মধ্যে কোনে দোষ নেই— তার নির্মল স্বভাব— তার মতো স্বভাবতই ভদ্রলোক খুব অল্পই দেখা যায় ।" পরেশবাৰু যেন একটা কোন নূতন তত্ত্ব লাভ করিলেন। তিনি বলিয়া উঠিলেন, “ঠিক কথা বলেছ, রাধে, ঠিক কথা বলেছ। তিনি ভালো লোক কিনা এইটেই দেখবার বিষয়— আন্তর্যামী ঈশ্বরও তাই দেখেন । বিনয় যে ভালো লোক, সেখানে যে আমার ভূল হয় নি, সেজন্তে আমি তাকে বার বার প্রণাম করি ” একটা জাল কাটিয়া গেল— পরেশবাবু যেন বাচিয়া গেলেন। পরেশবাবু তাহার দেবতার কাছে অন্যায় করেন নাই। ঈশ্বর যে তুলাদণ্ডে মানুষকে ওজন করেন সেই নিত্যধর্মের তুলাকেই তিনি মানিয়াছেন– তাহার মধ্যে তিনি নিজের সমাজের তৈরি কোনো কৃত্রিম বাটখারা মিশান নাই বলিয়া তাহার মনে আর কোনো গ্লানি রছিল না। এই অত্যস্ত সহজ কথাটা এতক্ষণ তিনি না বুঝিয়া কেন এমন পীড়া অনুভব করিতেছিলেন বলিয়া তাহার আশ্চর্য বোধ হইল । স্বচরিতার মাথায় হাত রাখিয়া বলিলেন, “তোমার কাছে আমার আজ একটা শিক্ষা হল মা !” স্বচরিতা তৎক্ষণাৎ তাহার পায়ের ধুলা লইয়া কহিল, “না না, কী বল বাবা!" পরেশবাবু কহিলেন, “সম্প্রদায় এমন জিনিস যে, মানুষ যে মাস্থ্য, এই সকলের