পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৈার 80 S দিলেন। পরেশবাবু দু-তিন বার চিঠিখানা পড়িয়া কহিলেন, “তা, কী হয়েছে ?” বরদাসুন্দরী উত্তেজিত হইয়া কহিলেন, "কী হয়েছে । আর কী হওয়া চাই ! আর বাকি রইলই বা কী ! ঠাকুর-পুজো, জাত মেনে চলা, সবই হল, এখন কেবল হিন্দুর ঘরে তোমার মেয়ের বিয়ে হলেই হয় । তার পরে তুমি প্রায়শ্চিত্ত করে হিন্দু সমাজে ঢুকবে— আমি কিন্তু বলে রাখছি—” পরেশ ঈষৎ হালিয়া কহিলেন, “তোমাকে কিছুই বলতে হবে না। অস্তুত এখনো বলবার সময় ছয় নি। কথা হচ্ছে এই যে, তোমরা কেন ঠিক করে বলে আছ হিন্দুর ঘরেই ললিতার বিবাহ স্থির হয়ে গেছে । এ চিঠিতে তো সে-রকম কিছুই দেখছি নে ৷” বরদাস্বন্দী কছিলেন, "কী হলে যে তুমি দেখতে পাও সে তো আজ পর্যন্ত বুঝতে পারলুম না । সময়মত যদি দেখতে পেতে তা হলে আজ এত কাগু ঘটত না। চিঠিতে মানুষ এর চেয়ে আর কত খুলে লিখবে বলে তো।” হারানবাবু কছিলেন, “আমার বোধ হয় ললিতাকে এই চিঠিখানি দেখিয়ে তার অভিপ্রায় কী তাকেই জিজ্ঞাসা করা উচিত । আপনার যদি অনুমতি করেন তা হলে আমিই তাকে জিজ্ঞাসা করতে পারি।” এমন সময় ললিতা ঝড়ের মতো ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া কহিল, “বাবা, এই দেখো, ব্রাহ্মসমাজ থেকে আজকাল এই-রকম অজান চিঠি আসছে।” পরেশ চিঠি পড়িয়া দেখিলেন । বিনয়ের সঙ্গে ললিতার বিবাহ যে গোপনে স্থির হইরা গিয়াছে পত্ৰলেখক তাহা নিশ্চিত ধরিয়া লইয়া নানাপ্রকার ভংসনা ও উপদেশ -দ্বারা চিঠি পূর্ণ করিয়াছে । সেই সঙ্গে, বিনয়ের মংলব যে ভালো নয়, সে যে দুইদিন পরেই তাহার ব্রান্ধ স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া পুনরায় হিন্দুঘরে বিবাহ করিবে, এ-সমস্ত আলোচনাও ছিল । পরেশের পড়া হইলে পর হারান চিঠিখানি লইয়া পড়িলেন ; কহিলেন, “ললিতা, এই চিঠি পড়ে তোমার রাগ হচ্ছে ? কিন্তু এই-রকম চিঠি লেখবার হেতু কি তুমিই ঘটাও নি ? তুমি নিজের ছাতে এই চিঠি কেমন করে লিখলে বল দেখি ” ললিতা মুহূর্তকাল স্তন্ধ থাকিয়া কছিল, “শৈলর সঙ্গে আপনার বুঝি এই সম্বন্ধে চিঠিপত্র চলছে ?” হারান তাহার স্পষ্ট উত্তর না দিয়া কছিলেন, "ব্রাহ্মসমাজের প্রতি কর্তব্য স্মরণ করে শৈল তোমার এই চিঠি পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে ।" ললিতা শক্ত হইয়া দাড়াইয়া কছিল, “এখন ব্রাহ্মসমাজ কী বলতে চান বলুন ।”