পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 8OO করবার চেষ্টা করেছি— কোনো ফল হয় নি।” ললিত কছিল, “দেখুন পাম্বুবাবু, আপনাকেও সাবধান করে দেবার একটা বিষয় আছে— আপনার চেয়ে যারা সকল বিষয়েই বড়ো তাদের সাবধান করে দেবার অহংকার আপনি মনে রাখবেন না।” এই কথা বলিয়াই ললিতা ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল । বরদাসুন্দরী কহিলেন, “এ-সব কী কাগু হচ্ছে ! এখন কী করতে হবে, পরামর্শ করো ।” পরেশবাবু কহিলেন, “যা কর্তব্য তাই পালন করতে হবে, কিন্তু এ-রকম করে গোলমাল করে পরামর্শ করে কর্তব্য স্থির হয় না। আমাকে একটু মাপ করতে হবে । এ সম্বন্ধে আমাকে এখন কিছু বোলো না । আমি একটু একলা থাকতে চাই ।” 8b স্বচরিতা ভাবিতে লাগিল, ললিতা এ কী কাও বাধাইয়া বসিল । কিছুক্ষণ চুপ করিয়! থাকিয় ললিতার গলা ধরিয়া কহিল, “আমার কিন্তু ভাই ভয় হচ্ছে ।” ললিতা জিজ্ঞাসা করিল, “কিসের ভয় ?” স্বচরিতা কহিল, “ব্রাহ্মসমাজে তে চারি দিকে হুলস্থল পড়ে গেছে— কিন্তু শেষকালে বিনয়বাবু যদি রাজি না হন ?” ললিতা মুখ নিচু করিয়া দৃঢ়স্বরে কহিল, “তিনি রাজি হবেনই।” স্বচরিতা কহিল, “তুই তো জানিস, পামুবাবু মাকে ওই আশ্বাস দিয়ে গেছেন ষে বিনয় কখনোই তাদের সমাজ পরিত্যাগ করে এই বিয়ে করতে রাজি হবে না । ললিতা, কেন তুই সব দিক না ভেবে পামুবাবুর কাছে কথাটা অমন করে বলে ফেললি ।” ললিত কহিল, “বলেছি বলে আমার এখনো অনুতাপ হচ্ছে না। পাতুবাবু মনে করেছিলেন তিনি এবং তার সমাজ আমাকে শিকারের জন্তুর মতো তাড়া করে একেবারে অতল সমুদ্রের ধার পর্যস্ত নিয়ে এসেছেন, এইখানে আমাকে ধরা দিতেই হবে— তিনি জানেন না এই সমূত্রে লাফিয়ে পড়তে আমি ভয় করি নে— তার শিকারী কুকুরের তাড়ায় তার পিঙ্করের মধ্যে ঢুকতেই আমার ভয় ।” স্বচরিতা কছিল, "একবার বাবার সঙ্গে পরামর্শ করে দেখি ।” ললিত কহিল, "বাবা কখনো শিকারের দলে যোগ দেবেন না এ আমি তোমাকে নিশ্চয় বলছি । তিনি তো কোনোদিন আমাদের শিকলে বাধতে চান নি। তার মতের