পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 8s (t পরাস্ত করতে পারবে না, এ আমি তোমাকে জোর করে বলতে পারি।” পরেশ কছিলেন, “আমি এই কথাটা খুব নিশ্চয় করে জানতে চাই যে, ললিত কেবল রাগের মাথায় বিদ্রোহ করে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করছে না ।” স্বচরিতা মুখ নিচু করিয়া কহিল, "না বাবা, তা যদি হত তা হলে আমি তার কথায় একেবারে কানই দিতুম না । ওর মনের মধ্যে যে কথাটা গভীর ভাবে ছিল সেইটেই হঠাৎ ঘা খেয়ে একেবারে বেরিয়ে এসেছে । .এপন একে কোনোরকমে চাপচুপি দিতে গেলে ললিতার মতো মেয়ের পক্ষে ভালো হবে না। বাবা, বিনয়বাবু লোক তো খুব ভালে৷ ” পরেশবাবু কছিলেন, “আচ্ছ, বিনয় কি ব্রাহ্মসমাজে আসতে রাজি হবে ?” স্বচরিতা কছিল, “তা ঠিক বলতে পারি নে। আচ্ছা বাবা, একবার গৌরবাবুর মার কাছে যাব ?” পরেশবাবু কছিলেন, “আমিও ভাবছিলুম, তুমি গেলে ভালো হয় ।” 8& আনন্দময়ীর বাড়ী হইতে রোজ সকালবেলায় বিনয় একবার বাসায় আসিত । আজ সকালে আসিয়া সে একখানা চিঠি পাইল । চিঠিতে কাহারও নাম নাই । ললিতাকে বিবাহ করিলে বিনয়ের পক্ষে কোনোমতেই তাহা মুখের হইতে পারে না এবং ললিতার পক্ষে তাহা অমঙ্গলের কারণ হইবে এই কথা লইয়া চিঠিতে দীর্ঘ উপদেশ আছে এবং সকলের শেষে আছে যে, এ সত্ত্বেও যদি বিনয় ললিতাকে বিবাহ করিতে নিবৃত্ত না হয় তবে একটা কথা লে যেন চিস্তা করিয়া দেখে, ললিতার ফুসফুস দুর্বল, ডাক্তারেরা যক্ষ্মার সম্ভাবন আশঙ্কা করেন । বিনয় এরূপ চিঠি পাইয় হতবুদ্ধি হইয়া গেল। এমনতরো কথার যে মিথ্য করিয়াও স্বষ্টি হইতে পারে বিনয় কখনো তাহা মনে করে নাই। কারণ, সমাজের বাধায় ললিতার সঙ্গে বিনয়ের বিবাহ যে কোনোক্রমে সম্ভব হইতে পারে না ইহা তো কাহারও কাছে অগোচর নাই । এইজন্তই তো ললিতার প্রতি তাহার হৃদয়ের অনুরাগকে এতদিন সে অপরাধ বলিয়াই গণ্য করিয়া আসিতেছিল । কিন্তু এমনতরো চিঠি ধখন তাহার হাতে আসিয়া পৌঁছিয়াছে তখন সমাজের মধ্যে এ সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ বিস্তর আলোচনা হইয়া গিয়াছে । ইহাতে সমাজের লোকের কাছে ললিতা যে কিরূপ অপমানিত হইতেছে তাহা চিন্তা করিয়া তাহার মন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হইয়া উঠিল । তাহার নামের সঙ্গে ললিতার নাম জড়িত হইয়া প্রকাগু ভাবে লোকের মুখে সঞ্চরণ করিতেছে