পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ebr রবীন্দ্র-রচনাবলী হারানবাৰু চলিয়া গেলে বিনয়ের মনের মধ্যে একট। বেদনা শূলের মতো বিধিতে লাগিল। সরলপ্তদয় উদারচিত্ত পরেশবাবু কত সমাদরের সহিত তাহদের দুই জনকে তাহার ঘরের মধ্যে ভাকিয়া লইয়াছিলেন– বিনয় হয়তো না বুঝিয়া এই ব্রাহ্ম পরিবারের মধ্যে আপন অধিকারের সীমা পদে পদে লভযন করিতেছিল, তবু তাহার স্নেহ ও শ্রদ্ধা হইতে সে একদিনও বঞ্চিত হয় নাই ; এই পরিবারের মধ্যে বিনয়ের প্রকৃতি এমন একটি গভীরতর আশ্রয় লাভ করিয়াছে যেমনটি সে আর-কোথাও পায় নাই। উহাদের সঙ্গে পরিচয়ের পর বিনয় যেন নিজের একটি বিশেষ সত্তাকে উপলব্ধি করিয়াছে। এই-ষে এত আদর, এত আনন্দ, এমন আশ্রয় যেখানে পাইয়াছে সেই পরিবারে বিনয়ের স্মৃতি চিরদিন কাটার মত বিধিয়া থাকিবে । পরেশবাবুর মেয়েদের উপর সে একটা অপমানের কালিমা আনিয়া দিল ! ললিতার সমস্ত ভবিষ্যৎ জীবনের উপরে সে এত বড়ো একটা লাঞ্ছনা আঁকিয় দিল ! ইহার কী প্রতীকার হইতে পারে ! হায় রে হায়, সমাজ বলিয়া জিনিসটা সত্যের মধ্যে কত বড়ো একটা বিরোধ জাগাইয়া তুলিয়াছে! ললিতার সঙ্গে বিনয়ের মিলনের কোনো সত্য বাধা নাই ; ললিতার সুখ ও মঙ্গলের জন্য বিনয় নিজের সমস্ত জীবন উৎসর্গ করিয়া দিতে কিরূপ প্রস্তুত আছে তাহা সেই দেবতাই জানেন যিনি উভয়ের অস্তধর্মী— তিনিই তো বিনয়কে প্রেমের আকর্ষণে ললিতার এত নিকটে আনিয়া দিয়াছেন– তাহার শাশ্বত ধর্মবিধিতে তো কোথাও বাধে নাই । তবে ব্রাহ্মসমাজের যে দেবতাকে পাহবাবুর মতো লোকে পূজা করেন তিনি কি আর-এক জন কেহ ? তিনি কি মানবচিত্তের অন্তরতর বিধাতা নন ? ললিতার সঙ্গে তাহার মিলনের মাঝখানে যদি কোনো নিষেধ করাল দন্ত মেলিয়া দাড়াইয়া থাকে, যদি সে কেবল সমাজকেই মানে আর সর্বমানবের প্রভুর দোহাই না মানে, তবে তাহাই কি পাপ নিষেধ নছে ? কিন্তু হায়, এ নিষেধ হয়তো ললিতার কাছেও বলবান । তা ছাড়া ললিত হয়তো বিনয়কে —কত সংশয় আছে । কোথায় ইহার মীমাংসা পাইবে ? (; o যখন বিনয়ের বাসায় হারানবাবুর আবির্ভাব হইয়াছে সেই সময়েই অবিনাশ আনন্দময়ীর কাছে গিয়া খবর দিয়াছে যে, বিনয়ের সঙ্গে ললিতার বিবাহ স্থির হইয়া গেছে । আনন্দময়ী কহিলেন, “এ কথা কখনোই সত্য নয়।” অবিনাশ কহিল, “কেন সত্য নয় ? বিনয়ের পক্ষে এ কি জলস্তৰ ?”