পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8>br রবীন্দ্র-রচনাবলী বিনয় হাসিতেও পারিল না, কোনো কথাও বলিতে পারিল না । জেলখানার দুঃখরহস্তের ভিতর দিয়া তাহার বন্ধু তাহার কাছে বন্ধুর চেয়ে আরও যেন অনেক বড়ো হইয়। বাহির হইয়াছে । গভীর সন্ত্রমে সে চুপ করিয়া রছিল । গোরা জিজ্ঞাসা করিল, “মা কেমন আছেন ?” বিনয় কহিল, “মা ভালোই আছেন।” পরেশবাবু কহিলেন, "এসে বাবা, তোমার জন্যে গাড়ি অপেক্ষা করে আছে।” তিন জনে যখন গাড়িতে উঠিতে যাইবেন এমন সময় ইপিাইতে ইfপাইতে অবিনাশ আসিয়া উপস্থিত । তাহার পিছনে ছেলের দল । অবিনাশকে দেখিয়াই গোরা তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠিয়া পড়িবার উপক্রম করিল, কিন্তু তংপূর্বেই সে আসিয়া পথরোধ করিয়া কহিল, "গৌরমোহনবাবু, একটু দাড়ান।” বলিতে বলিতেই ছেলেরা চীংকার-শব্দে গান ধরিল— দুখনিশীথিনী হল আজি ভোর । কাটিল কাটিল অধীনতা ডোর । গোরার মুখ লাল হইয়া উঠিল ; সে তাহার বজ্রস্বরে গর্জন করিয়া কহিল, "চুপ করো ? ছেলেরা বিস্মিত হইল চুপ করল ; গোরা কহিল, "অবিনাশ, এ-সমস্ত ব্যাপার 습, " অবিনাশ তাহার শীলের ভিতর হইতে কলাপাতায় মোড়া একটা কুন্দ ফুলের মোট গড়ে মালা বাহির করিল এবং তার অতুবতী একটি অল্পবয়স্ক ছেলে একখানি সোনার জলে ছাপানে কাগজ হইতে মিহি স্বরে দম-দেওয়া আর্গিনের মতে দ্রুতবেগে কারামুক্তির অভিনন্দন পড়িয়া যাইতে আরম্ভ করিল। অবিনাশের মালা সবলে প্রত্যাখ্যান করিয়া গোরা অবরুদ্ধ ক্রোধের কণ্ঠে কহিল, “এখন বুঝি তোমাদের অভিনয় স্বরু হল ? আজ রাস্তার ধারে আমাকে তোমাদের যাত্রার দলে সঙ সাজাবার জন্তে বুঝি এই এক মাস ধরে মহলা দিচ্ছিলে ?” অনেক দিন হইতে অবিনাশ এই প্ল্যান করিয়াছিল— সে ভাবিয়াছিল, ভারি একটা তাক লাগাইয়া দিবে। আমরা যে সময়ের কথা বলিতেছি তখন এরূপ উপদ্রব প্রচলিত ছিল না। অবিনাশ বিনকেও মন্ত্রণার মধ্যে লয় নাই, এই অপূর্ব ব্যাপারের সমস্ত বাহাদুরি সে নিজেই লইবে বলিয়া লুব্ধ হইয়াছিল । এমন-কি, খবরের কাগজের জন্য ইহার বিবরণ সে নিজেই লিপিয়া ঠিক করিয়া রাখিয়াছিল, ফিরিয়া গিয়াই তাহার দুই-একটা ফাক পূরণ করিয়া পাঠাইয়া দিবে স্থির ছিল।