পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 嘯 ୫୯୬ মহিম কছিলেন, “সর্বনাশ ! ওঁর নিজের ঠিক নেই, উনি ঠিক করবেন! তুমি এসেছ, এখন তোমার উপরেই সমস্ত ভার।” আজ বিনয় গভীর হইয়া চুপ করিয়া রছিল, তাহার স্বভাবসিদ্ধ পরিহাসের ছলেও সে কোনো কথা বলিবার চেষ্টা করিল না । গোরা বুঝিল, একটা গোল আছে। সে কহিল, “নিমন্ত্রণ করতে যাবার ভার নিতে পারি, মিঠাই ফরমাশ দেবারও ভার নেওয়া যায়, পরিবেষণ করতেও রাজি আছি, কিন্তু বিনয় যে তোমার মেয়েকে বিয়ে করবেনই লে ভার আমি নিতে পারব না। যার নিৰ্বন্ধে সংসারে এই-সমস্ত কাজ হয় তার সঙ্গে আমার বিশেষ চেনাশোনা নেই— বরাবর আমি তাকে দূরে থেকেই নমস্কার করেছি।” মহিম কছিলেন, “তুমি দূরে থাকলেই যে তিনিও দূরে থাকেন তা মনেও কোরে না। হঠাৎ কবে চমক লাগাবেন কিছু বলা যায় না । তোমার সম্বন্ধে তার মংলব কী তা ঠিক বলতে পারছি নে, কিন্তু এঁর সম্বন্ধে ভারি গোল ঠেকছে। একলা প্রজাপতি ঠাকুরের উপরেই সব বরাত না দিয়ে তুমি যদি নিজেও উদযোগী না হও তা হলে হয়তো অস্থতাপ করতে হবে, এ আমি বলে রাখছি।” গোরা কহিল, “যে ভার আমার নয় সে ভার না নিয়ে অনুতাপ করতে রাজি আছি, কিন্তু নিয়ে আমুতাপ করা আরও শক্ত । সেইটে থেকে রক্ষা পেতে চাই ।” মহিম কহিলেন, "ব্রাহ্মণের ছেলে জাত কুল মান সমস্ত খোওয়াবে, আর তুমি বলে, থেকে দেখবে ? দেশের লোকের হিন্দুয়ানি রক্ষার জন্যে তোমার অ’হার নিদ্রা বন্ধ, এ দিকে নিজের পরম বন্ধুই যদি জাত ভাসিয়ে দিয়ে ব্রাহ্মর ঘরে বিয়ে করে বসে তা হলে মামুষের কাছে যে মুখ দেখাতে পারবে না । বিনয়, তুমি বোধ হয় রাগ করছ, কিন্তু ঢের লোক তোমার অসাক্ষাতেই এই-সব কথা গোরাকে বলত— তারা বলবার জন্যে ছট্‌ফট্‌ করছে— আমি সামনেই বলে গেলুম, তাতে সকল পক্ষে ভালোই হবে। গুজবটা যদি মিথ্যাই হয় তা হলে সে কথা বললেই চুকে যাবে, যদি সত্যি হয় তা হলে বোঝাপড়া করে নাও ” মহিম চলিয়া গেলেন, বিনয় তখনো কোনো কথা কহিল না । গোরা জিজ্ঞাসা করিল, “কী বিনয়, ব্যাপারটা কী ?” বিনয় কছিল, “শুধু কেবল গোটকতক খবর দিয়ে অবস্থাটা ঠিক বোঝানো ভারি শক্ত, তাই মনে করেছিলুম আস্তে আস্তে তোমাকে সমস্ত ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলব— কিন্তু পৃথিবীতে আমাদের স্থবিধামত ধীরে-স্বন্থে কিছুই ঘটতে চায় না— ঘটনাগুলোও শিকারি বাঘের মতো প্রথমটা গুড়ি মেরে মেরে নিঃশব্দে চলে, তার পরে হঠাৎ এক