পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8૨૨ রবীন্দ্র-রচনাবলী সময় ঘাড়ের উপরে লাফ দিয়ে এসে পড়ে । আবার তার সংবাদও আগুনের মতো প্রথমটা চাপা থাকে, তার পরে হঠাৎ দাউ দাউ করে জলে ওঠে, তখন তাকে আর সামলানো যায় না । সেইজন্তেই এক এক সময় মনে হয়, কর্মমাত্রই ত্যাগ করে একেবারে স্থাণু হয়ে বসে থাকাই মানুষের পক্ষে মুক্তি ।” গোরা হাসিয়া কহিল, “তুমি একলা স্থাণু হয়ে বসে থাকলেই বা মুক্তি কোথায় ? সেই সঙ্গে জগৎ-স্বদ্ধ যদি স্থাণু হয়ে না ওঠে তা হলে তোমাকে স্থির থাকতে দেবে কেন ? সে আরও উলটো বিপদ হবে । জগং যখন কাজ করছে তখন তুমিও যদি কাজ না কর তা হলে যে কেবলই ঠকবে । সেইজন্তে এইটে দেখতে হবে ঘটনা যেন তোমার সতর্কতাকে ডিঙিয়ে না যায়— এটা না হয় যে, আর-সমস্তই চলছে, কেবল তুমিই প্রস্তুত নেই ।” বিনয় কহিল, “ওই কথাটাই ঠিক । আমিই প্রস্তুত থাকি নে । এবারেও আমি প্রস্তুত ছিলুম না । কোন দিক দিয়ে কী ঘটছে তা বুঝতেই পারি নি । কিন্তু যখন ঘটে উঠল তখন তার দায়িত্ব তো গ্রহণ করতেই হবে । বেট। গোড়াতে না ঘটলেই ভালে ছিল সেটাকে আজ অপ্রিয় হলেও তো অস্বীকার করা যায় না।” গোরা কহিল, "ঘটনাটা কী, না জেনে সেটার সম্বন্ধে তত্ত্বালোচনায় যোগ দেওয়া আমার পক্ষে কঠিন ৷” বিনয় খাড়া হইয়া বসিয়া বলিয়া ফেলিল, “আনিবার্য ঘটনী ক্রমে ললিতার সঙ্গে আমার সম্বন্ধ এমন জায়গায় এসে দাড়িয়েছে যে, তাকে যদি আমি বিবাহ না করি তবে চিরজীবন সমাজে তাকে অন্যায় এবং অমূলক অপমান সহ করতে হবে।” গোরা কহিল, “কী রকমটা দাড়িয়েছে শুনি ।” বিনয় কহিল, “সে অনেক কথা । সে ক্রমে তোমাকে বলব, কিন্তু ওটুকু তুমি মেনেই নাও ” গোরা কহিল, “আচ্ছা, মেনেই নিচ্ছি । ও সম্বন্ধে আমার বক্তব্য এই যে, ঘটনা যদি অনিবার্য হয় তার দুঃখ ও অনিবার্য। সমাজে ৰদি ললিতাকে অপমান のマf* করতেই হয় তো তার উপায় নেই।” বিনয় কহিল, “কিন্তু সেটা নিবারণ করা তো আমার হাতে আছে।” গোরা কহিল, “যদি থাকে তো ভালোই । কিন্তু গায়ের জোরে সে কথা বললে তো হবে না। অভাবে পড়লে চুরি করা, খুন করাও তো মাছবের হাতে আছে, কিন্তু সেটা কি সত্যি আছে ? ললিতাকে বিবাহ করে তুমি ললিতার প্রতি কর্তব্য করতে চাও, কিন্তু সেইটেই কি তোমার চরম কর্তব্য ? সমাজের প্রতি কর্তব্য নেই ?”