পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 8Rළු সমাজের প্রতি কর্তব্য স্মরণ করিয়াই বিনয় ব্রাহ্মবিবাহে সম্মত হয় নাই সে কথা সে বলিল না, তাহার তর্ক চড়িয়া উঠিল । লে কহিল, “ওই জায়গায় তোমার সঙ্গে বোধ হয় আমার মিল হবে না । আমি তো ব্যক্তির দিকে টেনে সমাজের বিরুদ্ধে কথা বলছি নে । আমি বলছি, ব্যক্তি এবং সমাজ দুইয়ের উপরেই একটি ধর্ম আছে— সেইটের উপরে দৃষ্টি রেখে চলতে হবে । যেমন ব্যক্তিকে বাচানোই আমার চরম কর্তব্য নয় তেমনি সমাজকে বাচানোও আমার চরম কর্তব্য নয়, একমাত্র ধর্মকে বাচানোই আমার চরম শ্রেয় ।” গোরা কছিল, “ব্যক্তি ও নেই সমাজও নেই, অথচ ধর্ম আছে, এমন ধর্মকে আমি মানি নে ৷” বিনয়ের রোধ চড়িয়া উঠিল । সে কহিল, “আমি মানি । ব্যক্তি ও সমাজের ভিত্তির উপরে ধর্ম নয়, ধর্মের ভিত্তির উপরেই ব্যক্তি ও সমাজ । সমাজ যেটাকে চায় সেইটেকেই যদি ধর্ম বলে মানতে হয় তা হলে সমাজেরই মাথা খাওয়া হয় । সমাজ যদি আমার কোনো স্কায়সংগত ধর্মসংগত স্বাধীনতায় বাধা দেয় তা হলে সেই অসংগত বাধা লঙ্ঘন করলেই সমাজের প্রতি কর্তব্য করা হয় । ললিতাকে বিবাহ করা যদি আমার অন্যায় না হয়, এমন-কি, উচিত হয়, তবে সমাজ প্রতিকূল বলেই তার থেকে নিরস্ত হওয়া আমার পক্ষে অধর্ম হবে ।” গোরা কহিল, “স্কায় অস্তায় কি একলা তোমার মধ্যেই বদ্ধ ? এই বিবাহের দ্বারা তোমার ভাবী সস্তানদের তুমি কোথায় দাড় করাচ্ছ সে কথা ভাববে না ?” বিনয় কহিল, “সেই রকম করে ভাবতে গিয়েই তো মানুষ সামাজিক অন্যায়কে চিরস্থায়ী করে তোলে । সাহেব-মনিবের লাথি খেয়ে যে কেরানি অপমান চিরদিন বহন করে তাকে তুমি দোষ দাও কেন ? সেও তো তার সস্তানদের কথাই ভাবে ।” গোরার সঙ্গে তর্কে বিনয় ষে জায়গায় আসিয়া পৌছিল পূর্বে সেখানে সে ছিল না। একটু আগেই সমাজের সঙ্গে বিচ্ছেদের সম্ভাবনাতেই তাহার সমস্ত চিত্ত সংকুচিত হইয়াছিল । এ সম্বন্ধে সে নিজের সঙ্গে কোনোপ্রকার তর্কই করে নাই এবং গোরার সঙ্গে তর্ক যদি উঠিয়া না পড়িত তবে বিনয়ের মন আপন চিরন্তন সংস্কার অনুসারে উপস্থিত প্রবৃত্তির উলটা দিকেই চলিত। কিন্তু তর্ক করিতে করিতে তাহার প্রবৃত্তি, কর্তবাবুদ্ধিকে আপনার সহায় করিয়া লইয়া প্রবল হইয়া উঠতে লাগিল । গোরার সঙ্গে খুব তর্ক বাধিয়া গেল। এইরূপ আলোচনায় গোরা প্রায়ই যুক্তিপ্রয়োগের দিকে যায় না— সে খুব জোরের সঙ্গে আপনার মত বলে। তেমন ❖U ግ