পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 8*ఏ তাছা নছে ; তাহার সঙ্গে গোরার এই কয়দিনের সঙ্গিনী কল্পনাও যে কতটা নিজের মায়া মিশ্রিত করিয়াছিল তাহা প্রথমটা গোরা বুঝিতে পারে নাই। কিন্তু ক্রমেই বুঝিল । স্টীমারে আসিতে আসিতে সে স্পষ্টই অনুভব করিল, পরেশবাবু যে তাহাকে আকর্ষণ করিতেছেন সে কেবল র্তাহার নিজগুণে নহে । এতদিন পরে গোরা আবার কোমর বাধিল । বলিল, ‘হার মানিব না ’ স্টীমারে বলিয়া বসিয়া, আবার দূরে বাইবে, কোনোপ্রকার স্বল্প বন্ধনে সে নিজের মনকে বধিতে দিবে না, এই সংকল্প মাটিল । এমন সময় বিনয়ের সঙ্গে তাহার তর্ক বাধিয়া গেল। বিচ্ছেদের পর বন্ধুর সঙ্গে এই প্রথম মিলনেই তর্ক এমন প্রবল হইত না । কিন্তু আজ এই তর্কের মধ্যে তাহার নিজের সঙ্গেও তর্ক ছিল । এই তর্ক উপলক্ষ্যে নিজের প্রতিষ্ঠাভূমিকে গোরা নিজের কাছেও ম্পই করিয়া লইতেছিল । এই জন্তই গোরা আজ এত বিশেষ জোর দিয়া কথা বলিতেছিল— সেই জোরটুকুতে তার নিজেরই বিশেষ প্রয়োজন ছিল । যখন তাহার আজিকার এই জোর বিনয়ের মনে বিরুদ্ধ জোরকেই উত্তেজিত করিয়া দিয়াছিল, যখন সে মনে মনে গোরার কথাকে কেবলই খণ্ডন করিতেছিল এবং গোরার নির্বন্ধকে অন্যায় গোঁড়ামি বলিয়া যখন তাহার সমস্ত চিত্ত বিদ্রোহী হইয়া উঠিতেছিল তখন বিনয় কল্পনাও করে নাই যে, গোরা নিজেকেই যদি আঘাত না করিত তবে আজ তাহার আঘাত হয়তো এত প্রবল হইত না । বিনয়ের সঙ্গে তর্কের পর গোরা ঠিক করিল, যুদ্ধক্ষেত্রের বাহিরে গেলে চলিবে না । আমি যদি নিজের প্রাণের ভয়ে বিনয়কে ফেলিয়া যাই, তবে বিনয় রক্ষা পাইবে त्र] । @ 8 গোরার মন তখন ভাবে আবিষ্ট ছিল— স্বচরিতাকে সে তখন একটি ব্যক্তিবিশেষ বলিয়া দেখিতেছিল না, তাহাকে একটি ভাব বলিয়া দেখিতেছিল । ভারতের নারীপ্রকৃতি স্বচরিত-মূর্তিতে তাহার সম্মুখে প্রকাশিত হইল। ভারতের গৃহকে পুণ্যে সৌন্দর্যে ও প্রেমে মধুর ও পবিত্র করিবার জন্তই ইছার আবির্ভাব। যে লক্ষ্মী ভারতের শিশুকে মানুষ করেন, রোগীকে সেবা করেন, তাপীকে সাৰনা দেন, তুচ্ছকেও প্রেমের গৌরবে প্রতিষ্ঠা দান করেন, যিনি দুঃখে দুৰ্গতিতেও আমাদের দীনতমকেও ত্যাগ করেন নাই, অবজ্ঞা করেন নাই, যিনি আমাদের পূজাৰ্হা হইয়াও আমাদের অযোগ্যতমকেও একমনে পূজা করিয়া আসিয়াছেন, যাহার নিপুণ স্বন্দর হাত দুইখানি