পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

880 রবীন্দ্র-রচনাবলী এ পর্যন্ত সে নিজের চেয়ে প্রবল ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন বন্ধুর প্রতিই নির্ভর করিয়া আসিয়াছে। অবশেষে অত্যন্ত সংকটের সময় আজ সে হঠাৎ আবিষ্কার করিয়াছে ইচ্ছাশক্তি নিজের না থাকিলেও ছোটোখাটো প্রয়োজনে ধারে-বরাতে কাজ চালাইয়া লওয়া যায়, কিন্তু আসল দরকারের বেলায় পরের তহবিল লইয়া কোনোমতেই কারবার চলে না | স্বৰ্ষ হেলিয়া পড়িতেই যেখানে ছায়া ছিল সেখানে রৌদ্র আসিয়া পড়িল । তখন তরুতল ছাড়িয়া আবার রাস্তায় বাহির হইল। কিছু দূরে যাইতেই হঠাৎ শুনিল, "বিনয়বাবু! বিনয়বাবু পরক্ষণেই সতীশ আসিয়া তাহার হাত ধরিল। বিদ্যালয়ের পড়া শেষ করিয়া সতীশ তখন বাড়ি ফিরিতেছিল । সতীশ কহিল, "চলুন, বিনয়বাবু, আমার সঙ্গে বাড়ি চলুন।” বিনয় কহিল, “সে কি হয় সতীশবাবু ?” সতীশ কহিল, "কেন হবে না ?” বিনয় কছিল, "এত ঘন ঘন গেলে তোমার বাড়ির লোকে আমাকে সহ করতে পারবে কেন ?” সতীশ বিনয়ের এই যুক্তিকে একেবারে প্রতিবাদের অযোগ্য জ্ঞান করিয়া কেবল কহিল, "না, চলুন।” তাহাদের পরিবারের সঙ্গে বিনয়ের যে সম্বন্ধ আছে সেই সম্বন্ধে যে কতবড়ো একটা বিপ্লব ঘটিয়াছে তাহা বালক কিছুই জানে না, সে কেবল বিনয়কে ভালোবাসে, এই কথা মনে করিয়া বিনয়ের হৃদয় অত্যন্ত বিচলিত হইল। পরেশবাবুর পরিবার তাহার কাছে যে-একটি স্বৰ্গলোক স্বষ্টি করিয়াছিল তাহার.মধ্যে কেবল এই বালকটিতেই আনন্দের সম্পূর্ণতা অক্ষুন্ন আছে ; এই প্রলয়ের দিনে তাহার চিত্তে কোনো সংশয়ের মেঘ ছায়া ফেলে নাই, কোনো সমাজের আঘাত ভাঙন ধরাইতে চেষ্টা করে নাই । সতীশের গলা ধরিয়া বিনয় কহিল, "চলো ভাই, তোমাকে তোমাদের বাড়ির দরজা পর্যন্ত পৌছে দিই ।” 尊 সতীশের জীবনে শিশুকাল হইতে স্বচরিতা ও ললিতার যে স্নেহ ও আদর সঞ্চিত হইয়া আছে সতীশকে বাহুদ্বারা বেষ্টন করিয়া বিনয় যেন সেই মাধুর্যের স্পর্শ লাভ করিল। সমস্ত পথ সতীশ যে বহুতর অপ্রাসঙ্গিক কথা অনর্গল বকিয়া গেল তাহা বিনয়ের কানে মধুবর্ষণ করিতে লাগিল। বালকের চিত্তের সরলতার সংস্রবে তাহার নিজের জীবনের জটিল সমস্তাকে কিছুক্ষণের জন্য সে একেবারে ভুলিয়া থাকিতে পারিল । পরেশবাবুর বাড়ির সম্মুখ দিয়াই স্বচরিতার বাড়ি যাইতে হয়। পরেশবাবুর